বন্যায় পানিবন্দি মানুষ, জানমাল রক্ষায় ও পুনর্বাসনে জোর দিতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বৃষ্টিপাত কমলেও সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। শুক্রবার যুগান্তরে প্রকাশ-সিলেট বিভাগের চার জেলায় এখনো ১৬ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন, তাদের অধিকাংশই পড়েছেন খাবার সংকটে। তাদের অভিযোগ, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় পর্যাপ্ত খাবার যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে একরকম মানবেতর অবস্থায় দিন কাটছে বানভাসি পরিবারগুলোর। প্রত্যন্ত অঞ্চলে দুর্ভোগ আরও বেশি। এদিকে পানিতে ডুবে মৌলভীবাজার সদর ও বড়লেখা এবং সিলেটের গোয়াইনঘাটে তিন শিশু ও এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করায় সিলেট শিক্ষাবোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আগামী ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। সিলেট অঞ্চল ছাড়াও টাঙ্গাইলের ভুঞাপুর, উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম ও বগুড়ায় নদীভাঙনের ফলে অনেক বাড়িঘর বিলীন হয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে মানুষ।
দেশে বর্ষা মৌসুমে বন্যা স্বাভাবিক ঘটনা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা দেশের কৃষি খাতের জন্য আশীর্বাদও বয়ে আনে। প্রাকৃতিকভাবেই ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে সিলেটে বৃষ্টি হয় বেশি। তবে গত কয়েক বছর ধরে সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যা ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। বর্ষাকালে প্লাবিত হচ্ছে এ অঞ্চল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিলেটে বন্যার ভয়াবহতার পেছনে নদীর নাব্যতা সংকট যেমন দায়ী, তেমনি অপরিকল্পিত নগরায়ণ, দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার কারণেও এ অঞ্চলের মানুষ ঘন ঘন বন্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। আমরা মনে করি, সুষ্ঠু নদী ও বন্যা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সিলেটে বন্যার ভয়াবহতা কমানো সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও পেশাজীবীদের সঙ্গে নিয়ে দ্রুত টেকসই বন্যা প্রতিরোধী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সরকারের উদ্যোগী হওয়া। সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে প্রাকৃতিক প্লাবনভূমিতে অবৈধ বসতি গড়তে দেখা যায়। জলাধার ও প্লাবন ভূমি রক্ষায় কর্তৃপক্ষকে তাই কঠোর হওয়ার পাশাপাশি জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে। সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পানি প্রবাহের গতিপথ স্বাভাবিক রাখতে হবে। বন্যাকবলিত এলাকার দুর্গত মানুষের মানবিক বিপর্যয়ের দিকগুলোর প্রতি দিতে হবে গুরুত্ব। মানুষের জানমাল রক্ষা, চিকিৎসা, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসনের ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য। দুর্গত এলাকায় যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে সেবাধর্মী বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও।
আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। বন্যার পানিতে মাছসহ যেসব জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী ভেসে আসে, সেগুলোর সবই নিরীহ নয়। বিশেষ করে বিষধর সাপের বিষয়ে দুর্গত এলাকার মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে। বাংলাদেশ ভাটির দেশ। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নদীর উৎস দেশের ভূ-সীমানার বাইরে। তাই অভিন্ন নদীগুলোর গতি-প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশ, বিশেষ করে ভারত ও নেপালের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনার বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। গত ৫০ বছরে দেশে প্রচুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ তৈরি হয়েছে। পরিতাপের বিষয়, বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে সরকার সাফল্যের পরিচয় দিতে পারছে না। সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।