নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প: ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানোর সংস্কৃতির অবসান দরকার
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গত ৩০ এপ্রিল ‘প্রকল্প বাস্তবায়নে নৌমন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা : বাড়তি ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের বোঝা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল যুগান্তরে। এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরদিনই মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম সচিবকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল। কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও তদন্ত প্রতিবেদনটি পাওয়া গেছে দু’মাস পর। এ প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়নাধীন ৩২টি প্রকল্পের মধ্যে ২৪টি নির্ধারিত ব্যয় ও সময়ের মধ্যে শেষ হয়নি। এর মধ্যে ২০টি প্রকল্পের জন্য যে ব্যয় নির্ধারিত হয়েছিল, তার চেয়ে অতিরিক্ত ৯ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা ব্যয় বেড়েছে। ২৪টি প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে মোট ৬৮ বছর। এ হিসাবে একেকটি প্রকল্প বাস্তবায়নে গড়ে ২.৮৫ বছর বেশি সময় ব্যয় করতে হবে। আশ্চর্যই বলতে হবে, একটি প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে সর্বোচ্চ ৮ বছর। অথচ প্রকল্পটি ৩ বছরে বাস্তবায়িত হওয়ার কথা ছিল। উল্লেখ করা দরকার, যেসব প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব এখনো সরকার অনুমোদন দেয়নি, তদন্ত প্রতিবেদনটিতে সেগুলো উল্লেখ করা হয়নি। বলা বাহুল্য, সেগুলো ধরা হলে বাড়তি ব্যয় ও মেয়াদ আরও বেড়ে যাবে।
প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বেড়ে যাওয়া একটা অনিবার্য নিয়মিত ঘটনা হিসাবে দাঁড়িয়ে গেছে দেশে। খুব কম প্রকল্পেরই নাম করা যাবে, যেগুলো নির্ধারিত সময় ও ব্যয়ে বাস্তবায়িত হয়েছে। বলা নিষ্প্রয়োজন, এই রীতি আমাদের অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, এ বিষয়টি নিয়ে পত্রপত্রিকায় অসংখ্য লেখালেখি হলেও সমস্যাটির কোনো সুরাহা হচ্ছে না। তদন্ত প্রতিবেদনে নির্ধারিত ব্যয় ও মেয়াদে প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় ১৪টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় যে কারণ, তা হলো সঠিকভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এছাড়া ডিপিপি প্রণয়ন, পরামর্শক নিয়োগ, ডিজাইন ও ড্রয়িং প্রস্তুত, প্রকিউরমেন্ট কাজের অগ্রগতি মনিটরিংয়ে প্রকল্প পরিচালক, সংস্থা প্রধান ও পিআইসির ভূমিকা ফলপ্রসূ নয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে প্রকল্প পরিচালকদের অদক্ষতার প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়াসহ ১৩ দফা সুপারিশ করা হয়েছে।
আমরা মনে করি, প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বাড়ানোর যে সংস্কৃতি চালু রয়েছে দেশে, এর অবসান হওয়া উচিত। এজন্য প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের সক্ষমতা একটি বড় ফ্যাক্টর। জবাবদিহিতার বিষয়টাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই মনে করেন, প্রকল্প থেকে অবৈধ অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যেই সময় ও ব্যয় বাড়ানো হয়। তাই প্রতিটি প্রকল্পের ক্ষেত্রেই যথাযথ মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট কারও অসৎ উদ্দেশ্য থাকলে তার বিরুদ্ধে নিতে হবে ব্যবস্থা।