Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

কমলাপুর রেলস্টেশনে দুর্নীতি

মূলোৎপাটন করতে হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কমলাপুর রেলস্টেশনে দুর্নীতি

‘কমলাপুর স্টেশন’ নামে পরিচিত ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন দেশের পরিবহণ খাতের একটি ব্যস্ততম অবকাঠামো। রাজধানী ঢাকার প্রবেশদ্বার হিসাবে বিবেচিত এ স্টেশনের একটি আইকনিক বা প্রতীকী মর্যাদা রয়েছে। ষাটের দশকের শেষদিকে যখন এই দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যটি নির্মিত হয়, তখন শুধু এদেশেই নয়, গোটা উপমহাদেশে অন্যতম আকর্ষণীয় রেলস্টেশন ছিল এটি। এখনো সেই অনন্য স্থাপত্যশৈলী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কমলাপুর রেলস্টেশন। তবে এ স্টেশন বর্তমানে বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ভাসমান জনগোষ্ঠী, প্ল্যাটফরমের উচ্চতা, নিরাপত্তাহীনতা, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড, কুলি সংকট, তথ্যের অপ্রাপ্যতা ইত্যাদি। নানা অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনায় এর সৌন্দর্যই শুধু ম্লান হয়ে যায়নি, মুখ থুবড়ে পড়েছে যাত্রীসেবাও। যুগান্তরের সরেজমিন অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে সেই চিত্র।

স্টেশনে ঢুকলেই নজরে পড়ে এর হতশ্রী চেহারা। স্টেশন থেকে উধাও হয়ে গেছে ডিজিটাল ইনফরমেশন বুথ, এলইডি কোচ লোকেটর, টিভি মনিটর, এমনকি সম্প্রতি বসানো স্বয়ংক্রিয় টিকিট ভেন্ডিং মেশিনও। মনিটর আটকানোর লোহার গ্রিল পর্যন্ত খুলে নেওয়া হয়েছে। চুরি হয়ে গেছে বেশকিছু এসি, ফ্যান, বাতিসহ বিভিন্ন সেবামূলক উপকরণ। অপরিচ্ছন্নতার কথা তো বলাই বাহুল্য। প্রথম শ্রেণির বিশ্রামাগারেও দুর্গন্ধে টেকা দায়। টয়লেট পরিষ্কার করা হয় না দীর্ঘদিন। স্টেশনের দুটি ‘হেল্প ডেস্ক’ বেশিরভাগ সময় ফাঁকা থাকে। স্টেশনে ঢোকার মুখে লোহার খাঁচার প্রতিবন্ধকতা স্থাপনের কারণে যাত্রী ভোগান্তি আরও বেড়েছে। স্টেশনে থাকা রেলকোচগুলো রয়েছে প্রায় অরক্ষিত অবস্থায়। সদ্য চালু হওয়া পর্যটক এক্সপ্রেসের একটি এসি কোচ পড়ে আছে প্ল্যাটফরম ঘেঁষে। ফলে কোচের ভেতরের প্রায় সব সরঞ্জাম চুরি হয়ে গেছে। জানা যায়, অত্যাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন এসব কোচের একেকটির মূল্য ছয় কোটি টাকার বেশি।

কমলাপুর রেলস্টেশনের এ অব্যবস্থা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রেলস্টেশনগুলোয় যখন গড়ে উঠেছে যাত্রীসেবার অত্যাধুনিক নানা ব্যবস্থা, তখন আমাদের দেশের প্রধান স্টেশনটিতেও বিরাজ করছে সেকেলে ব্যবস্থাপনা। দেশের প্রধান রেলস্টেশনেরই যখন এই অবস্থা, তখন অন্যান্য স্টেশনের অবস্থা কী, তা সহজেই অনুমেয়। বস্তুত সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার অভাবেই তৈরি হয়েছে এ অবস্থা। বোঝা যাচ্ছে, কমলাপুর স্টেশনের আষ্টেপৃষ্ঠে বাসা বেঁধেছে দুর্নীতি। এর মূলোৎপাটন জরুরি। রেলপথমন্ত্রী বলেছেন, রেলওয়ের যেসব কর্মকর্তার ওপর কমলাপুর স্টেশনের সার্বিক দায়-দায়িত্ব রয়েছে, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে; দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা রেলপথমন্ত্রীর এ বক্তব্যের বাস্তবায়ন দেখতে চাই। কমলাপুর রেলস্টেশনকে ঘিরে মাল্টিমোডাল পরিবহণ ট্রান্সপোর্ট হাব নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা। বস্তুত এ স্টেশনকে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির আওতায় আনার বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে কমলাপুর স্টেশন ঘিরে যত দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থা বিরাজ করছে, সেসব দূর করতে হবে জরুরি ভিত্তিতে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম