প্রস্তাবিত নৌপরিবহণ আইন
কঠোর বিধান আরোপের বিকল্প নেই
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
নৌদুর্ঘটনায় প্রতিবছর অনেক মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন, নিখোঁজ হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, মালিক, চালক বা শ্রমিকদের আইনভঙ্গ, অবহেলা এবং ফিটনেসহীন নৌযানের কারণেই দুর্ঘটনার রাশ টানা সম্ভব হচ্ছে না। এমন অবস্থায় নৌদুর্ঘটনায় শুধু অর্থদণ্ড বাড়িয়ে আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে সরকার। মঙ্গলবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-নৌযান দুর্ঘটনা ও মানুষের প্রাণহানি হলে বিদ্যমান ৫ বছর কারাদণ্ডের বিধানের সঙ্গে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান যুক্ত করে ‘অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ আইন’-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে নৌপরিবহণ অধিদপ্তর। যদিও নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের এক প্রস্তাবে নৌদুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড এবং ৫ লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছিল। খসড়াটি জাতীয় সংসদে উত্থাপনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে রয়েছে বলে জানা গেছে।
আইনে কঠোর সাজার বিধান না থাকলে তা যে মালিক-শ্রমিকরা তোয়াক্কা করতে চাইবেন না, সেটা বলাই বাহুল্য। সড়কের ক্ষেত্রেও আমরা দেখেছি, দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হলে আর্থিক জরিমানার পাশাপাশি কারাদণ্ডের যে বিধান রাখা হয়েছে, তা খুবই কম। পরিতাপের বিষয়, মালিক-শ্রমিকদের চাপে অতীতেও নৌচলাচল আইনের খসড়ায় কঠোর বিধান থেকে সরকারকে পিছু হটতে দেখা গেছে। আমরা মনে করি, এভাবে আইনের বাস্তবায়ন বা কঠোর বিধান থেকে পিছু হটার অর্থ হলো সাধারণ মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার চেয়ে সংশ্লিষ্ট মালিক-শ্রমিকদের স্বার্থকে বড় করে দেখা, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। কারণ প্রতিবছর দেশজুড়ে নৌযান দুর্ঘটনায় যেসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটে, এর পেছনে অতিরিক্ত যাত্রী বহন, ফিটনেসহীন নৌযান চালানোসহ নানা ধরনের অনিয়মই প্রধানত দায়ী।
অনিবন্ধিত নৌযানের বেপরোয়া চলাচল, বিশেষ করে বালুবাহী বাল্কহেডের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। কিন্তু নিবন্ধন না থাকায় বাল্কহেডের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে না নৌ অধিদপ্তর। এ ব্যাপারে কঠোর আইন প্রণয়নের কথা বারবার বলা হচ্ছিল। জানা যায়, এবারের প্রস্তাবিত আইনের ৩৫ ধারায় সার্ভে সনদ ছাড়া নৌযান চলাচল করলে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড বা তিন লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান যুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা কিছুটা হলেও সন্তোষজনক। অবশ্য একই সঙ্গে নদীদূষণ রোধেও কঠোর আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন বলে মনে করি আমরা। মনে রাখা দরকার, বর্তমানে আগের চেয়ে বড় আকারের নৌযান চলাচল বেড়েছে, যেখানে যাত্রী ও পণ্য দুই-ই বেশি বহন করা যায়। ফলে বড় দুর্ঘটনা হলে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হবে বেশি।
ভুলে গেলে চলবে না, সড়ক ও নৌপথসহ চলাচলের সব মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কঠোর আইন করা না গেলে সংশ্লিষ্ট খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো এবং মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। যাত্রীদের জীবন ও সম্পদকে নিরাপদ করার জন্য কোনো ধরনের ছাড় না দিয়ে কঠোর আইন পাশ ও প্রয়োগের বিকল্প নেই। বিশ্বের যেসব দেশে সড়ক ও নৌপথে দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে থাকে, বাংলাদেশ তার অন্যতম। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আইন প্রয়োগে সরকার শক্ত অবস্থান নেবে, এটাই প্রত্যাশা।