রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জন নয়
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যথাযথ উদ্যোগ নিন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মীর সাম্প্রতিক যে সংকট দেশবাসী লক্ষ করেছে, এর মধ্য দিয়ে প্রবাসে শ্রমবাজার নিয়ে কর্তৃপক্ষের গাফিলতি অনেকটা স্পষ্ট হয়েছে। বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনৈতিক সংকট রেমিট্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আসন্ন (২০২৪-২৫) বাজেটে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স আয়ের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমানোর কথাই আলোচনায় রয়েছে। জানা যায়, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ শতাংশ কমিয়ে প্রবৃদ্ধির সম্ভাব্য হার ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদভুক্ত (জিসিসি) দেশগুলোয় দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি রেমিট্যান্স প্রবাহে প্রভাব ফেলবে।
আমরা লক্ষ করছি, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানির হার বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রেমিট্যান্স আসছে না। সাধারণত ঈদুল ফিতরের আগে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ে, কিন্তু এ বছর ঈদের আগের মাস মার্চে রেমিট্যান্স কমেছে। জানা যায়, হুন্ডির কারণে রেমিট্যান্স বাড়ানো যাচ্ছে না। রেমিট্যান্স আহরণে ব্যাংক যত প্রণোদনাই প্রদান করুক না কেন, হুন্ডিতে এর চেয়ে বেশি অর্থ প্রদান করা হচ্ছে। নিত্যনতুন উপায়ে হুন্ডিচক্র তাদের জাল বিস্তার করে চলেছে। বস্তুত হুন্ডিচক্র শক্তিশালী হওয়ার কারণগুলো চিহ্নিত, এ সংকটের সমাধানে কী করণীয় তা-ও বহুল আলোচিত। কাজেই আলোচিত এ সমস্যার সমাধানে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জনশক্তি রপ্তানি খাত দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। কাজেই এ খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। সম্প্রতি প্রবাসী আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি বৈঠক করেছে। ওই বৈঠকে রেমিট্যান্স প্রণোদনা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদেশি শ্রমবাজার আমাদের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে ডলার সংকটের সময় এর গুরুত্ব আরও বেড়েছে। তাই এ বাজার যাতে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে সরকারকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির ওপরও গুরুত্ব বাড়াতে হবে। প্রবাসীরা যাতে তাদের উপার্জিত অর্থ বৈধপথে দেশে পাঠাতে পারেন, সে বিষয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। রেমিট্যান্স বাড়াতে কর্তৃপক্ষ যখন যে পদক্ষেপ নেবে, তা কতটা সময়োপযোগী হয়েছে তা-ও খতিয়ে দেখতে হবে। অর্থ পাচারসহ দুর্নীতি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বস্তুত রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে যত পদক্ষেপই নেওয়া হোক না কেন, সরষের ভেতরের ভূত তাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া না হলে কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলবে কি না সন্দেহ।