Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

স্লুইসগেট নির্মাণে অনিয়ম

দুর্নীতি বিস্তার লাভ করছে সর্বক্ষেত্রে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

স্লুইসগেট নির্মাণে অনিয়ম

প্রতীকী ছবি

দেশের বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুস বাণিজ্যের বিষয়টি নতুন নয়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর পরিধি এতটাই বড় হয়, তা রীতিমতো সাগরচুরির পর্যায়ে পড়ে। সম্প্রতি পানি নিষ্কাশন রেগুলেটর বা স্লুইসগেট নির্মাণের ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ঘটেছে। রোববার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, সাতক্ষীরার বিনেরপোতা কুলুতিয়া খালসহ একাধিক প্রকল্পে বড় অঙ্কের অর্থ লোপাটের সুযোগ দিয়ে আগাম ‘প্যাকেজ ঘুস’ লেনদেন হয়েছে। অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে এর সত্যতাও পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জানা যায়, পানি নিষ্কাশন রেগুলেটর বা স্লুইসগেট নির্মাণের ক্ষেত্রে এর স্থায়িত্ব ঠিক রাখতে মাটির ২০ ফুট গভীর থেকে শিট পাইলিং করার কথা থাকলেও করা হয় মাত্র ১০ ফুট। শুধু তাই নয়, চলমান এসব প্যাকেজের কাজে যে অগ্রগতি দেখানো হয়েছে, তার সঙ্গে বাস্তবতার মিলও পাওয়া যায়নি। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শিট পাইলের ক্যাপ ভেঙে উত্তোলন করে সরেজমিন দেখাতে বলা হলে প্রধান প্রকৌশলীকে না জানিয়ে ৩০টি শিট পাইল উঠিয়ে সাইট থেকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে। উল্লেখ্য, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মাধ্যমে ৪৭৫ কোটি টাকার যেসব প্রকল্প হাতে নিয়েছে, তার মধ্যে নতুন রেগুলেটর নির্মাণ-মেরামত, নদীশাসন, বাঁধ নির্মাণ, মেরামত ও প্রতিরক্ষার মতো কাজও রয়েছে। ব্যয়বহুল এসব কাজে এমন মহা লুটপাট শুধু নিন্দনীয়ই নয়, উদ্বেগজনকও বটে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাউবোর একাধিক নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন, এখানে যা ঘটেছে, তা পুরোপুরি মাটির নিচে সরকারি অর্থ লুটপাটের খোলামেলা আয়োজন। শুধু রেগুলেটর নির্মাণের এ একটি প্যাকেজে নয়, অভিযোগ উঠেছে, লুটপাটের এমন মহা আয়োজন করা হয়েছে অন্য ৭৪টি প্যাকেজেও। ৪৭৬ কোটি টাকার এ প্রকল্পের পিডি করা হয়েছে পাউবোর খুলনার তত্ত্বাবধায়ক এক প্রকৌশলীকে, যার বিরুদ্ধে কক্সবাজার ও সুনামগঞ্জে নির্বাহী প্রকৌশলী থাকাকালীন ভেরিয়েশনের (কাজের বাস্তব ব্যয়ের চেয়ে অতিরিক্ত খরচ) গুরুতর অভিযোগ ছিল। একজন প্রভাবশালীর তদবিরে বারবার ফসকে যাওয়া ওই ব্যক্তিকে এ প্রকল্পেরও পিডি করা হয়। ক্ষমতার দাপটে যিনি কোনো চেইন অব কমান্ড মানেন না বলেও রয়েছে অভিযোগ।

আমরা মনে করি, দুদকের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনাসহ প্রকল্পগুলোর সুষ্ঠু সম্পাদনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। কেননা স্লুইসগেট, বাঁধ কিংবা নদী খননে ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলে তার বিরূপ প্রভাব সেখানকার মানুষের ওপরই পড়ে। কখনো কখনো তা পরিণত হয় মরণফাঁদে। এমনিতেই দেশের উপকূলসহ নদীবিধৌত এলাকার মানুষকে অতিবৃষ্টি থেকে সৃষ্ট বন্যা, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে টিকে থাকতে হয়। উন্নয়ন প্রকল্পগুলোয় অনিয়ম হলে তা সে অঞ্চলের মানুষের জানমালের ক্ষতিই শুধু করে না, দেশের অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব ফেলে। পরিতাপের বিষয়, সরকারের নানা প্রকল্পে কতিপয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দুর্নীতির এমন চিত্র অতীতেও ধরা পড়েছে; কিন্তু দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হওয়ার উদাহরণ খুব বেশি নেই। দুর্নীতির মূলোৎপাটন হয় না বিধায় প্রায় সময়েই প্রকাশ হওয়া ভয়াবহ এমন অনিয়মের ঘটনা আমাদের ভাবিয়ে তোলে। দেশ ও দশের স্বার্থে তাই দুর্নীতির মূলোৎপাটন জরুরি। সরকার উপরিউক্তসহ সব প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে আরও বেশি আন্তরিক হবে-এটাই প্রত্যাশা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম