ঋণখলাপিদের ধরতে দৃঢ় সংকল্প: অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের বাস্তবায়ন চাই
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ঋণখেলাপিদের ধরতে যে দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেছেন, সেজন্য তাকে আমরা স্বাগত জানাই। রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘এখন ঋণখেলাপিদের ধরতে হবে, আমি ধরতে চাই।’ দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের সরাসরি মুখোমুখি হয়ে তিনি এ কথা বলেছেন। দেশের আর্থিক খাতের জন্য এটি একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করছে অবশ্যই। আমরা তার এ বক্তব্যের বাস্তবায়ন দেখতে চাই। উল্লেখ্য, পূর্ববর্তী সরকারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বলেছিলেন, ‘ব্যাংকের টাকা জনগণের টাকা, এ টাকা নিলে ফেরত দিতে হবে। দেশের জনগণের টাকা বেহাত হোক বা ফেরত না আসুক, এটি চাইতে পারি না। সরকারি বা বেসরকারি যে ব্যাংক থেকেই ঋণ নেওয়া হোক না কেন, ঋণের অর্থ ফেরত দিতে হবে।’ তিনি এমন কথাও বলেছিলেন যে, খেলাপি ঋণ আদায়ের সময় আত্মীয়স্বজন চেনা যাবে না। পাশাপাশি ভালো ঋণগ্রহীতাদের প্রণোদনা দেওয়া হবে। খেলাপি ঋণের বিষয়ে এ দৃঢ় অবস্থানের জন্য তখন আমরা তাকে সাধুবাদ জানিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে বা খেলাপি ঋণ আদায়ে তাকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আমরা দেখিনি; বরং খেলাপি ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে নানা রকম ছাড় দিতে দেখেছি। বর্তমান অর্থমন্ত্রী তার কথার প্রতি বিশ্বস্ত থাকবেন বলেই আশা করি আমরা।
দেশে ব্যাংক খাতে দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যা বিরাজ করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো উচ্চ খেলাপি ঋণ। মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বস্তুত খেলাপি ঋণ শুধু ব্যাংক খাতে নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেই ঝুঁকি তৈরি করছে। মাত্রাতিরিক্ত খেলাপির প্রভাব পড়ছে ঋণ ব্যবস্থাপনায়। এ কারণে এগোতে পারছেন না ভালো উদ্যোক্তারা। ফলে বাড়ছে না বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান। কাজেই খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বিগত সময়ে দেখা গেছে, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ঋণ পুনঃতফসিল, ঋণ অবলোপন ইত্যাদির মাধ্যমে ঋণখেলাপির দায় থেকে মুক্ত থেকেছেন। এর মাধ্যমে খেলাপি ঋণ সমস্যার কোনো স্থায়ী সমাধান আসেনি, বরং তা ঋণ আদায় প্রক্রিয়াকে আরও প্রলম্বিত করেছে। তাই খেলাপি ঋণসহ ব্যাংক খাতের সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। সমাধানটি এমন হওয়া উচিত, যাতে ঋণখেলাপিরা যত বড় প্রভাবশালীই হোন, তাদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত হবে।