Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

আলোচনায় ব্যাংক খাত: স্বচ্ছতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আলোচনায় ব্যাংক খাত: স্বচ্ছতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বৃহস্পতিবার দেশের ব্যাংক খাত নিয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করেছিল। ‘বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের সামনে কী’ শীর্ষক এই সেমিনারে অংশগ্রহণকারী অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যে উঠে আসে এ খাতের বহুল আলোচিত সমস্যাগুলো। যেমন, দেশে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকা; রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকেও খেলাপি ঋণ বাড়ছে, অথচ ব্যাংক লুটেরাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে না কোনো ব্যবস্থা। খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য যে আইনি কাঠামো দরকার, দেশে তা নেই। পর্যাপ্ত বিচারকের অভাবে ঋণখেলাপির মামলাগুলো সহজে নিষ্পত্তি হচ্ছে না। ব্যাংকে টাকা জমা রেখে আমানতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ব্যাংক খাতে সুশাসন, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নেই বললেই চলে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তহীনতা, ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের প্রসঙ্গও আলোচনায় আসে।

ব্যাংক দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। সবাই জানেন, এ খাতে দীর্ঘদিন ধরে বিরাজ করছে নানা সমস্যা। দুর্নীতি-অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা তো আছেই, সেই সঙ্গে এ খাতের একটি বড় সমস্যা হলো উচ্চ খেলাপি ঋণ। মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলা যায়, খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলোর ভিত্তি দুর্বল করে দিচ্ছে। খেলাপি ঋণ শুধু ব্যাংক খাতে নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেই ঝুঁকি তৈরি করছে। মাত্রাতিরিক্ত খেলাপির প্রভাব পড়ছে ঋণ ব্যবস্থাপনায়। ফলে এগোতে পারছেন না ভালো উদ্যোক্তারা। পরিণামে বাড়ছে না বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান। কাজেই খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সংকট নিরসনের স্থায়ী পদক্ষেপ হিসাবে ব্যাংক খাতকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন।

এ প্রেক্ষাপটে সব ব্যাংকে শুধু যোগ্যতার ভিত্তিতে পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করেছে সিপিডি। পাশাপাশি নিয়ম মেনে সীমার মধ্যে ঋণ বিতরণ করার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। এক ব্যক্তি বা গ্রুপের হাতে একটির বেশি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণভার না দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক খাত সংস্কারে একটি ব্যাংক কমিশন গঠনেরও দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।

বস্তুত এ খাতের সংস্কারে একটি কমিশন গঠনের দাবি দীর্ঘদিনের। ব্যাংক কোম্পানি আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার দাবিও রয়েছে। ব্যাংকগুলোর, বিশেষত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকাণ্ড সূক্ষ্মভাবে তদারক করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন। সরকারের বিগত মেয়াদে ব্যাংক খাত নানা সমস্যায় পড়েছে। আমাদের মনে আছে, তখনকার অর্থমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই খেলাপি ঋণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিলেন। খেলাপি ঋণ আদায়ের বিষয়ে দৃঢ় অবস্থানের জন্য আমরা তাকে সাধুবাদ জানিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক, এ বক্তব্যের বাস্তবায়ন আমরা দেখিনি। তাই বর্তমান অর্থমন্ত্রী খেলাপি ঋণসহ ব্যাংক খাতে বিদ্যমান সব অনিয়ম নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন বলে আমরা আশা করছি। অনিয়ম রোধে ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এ খাতের নিয়োগ ও ব্যবস্থাপনাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে সততা ও দক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। কোথাও কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি ধরা পড়লে সব ধরনের রাজনৈতিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে থেকে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এ বিষয়ে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, ব্যাংক খাতকে বর্তমান অবস্থা থেকে টেনে তুলতে হলে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা এমন একটি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম