বাড়ছে নগরমুখী মানুষের স্রোত
বিকেন্দ্রীকরণের বিকল্প নেই
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২০ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশে নগরমুখী মানুষের সংখ্যা এতটাই অস্বাভাবিক গতিতে বাড়ছে যে, বর্তমানে নগরে বাস করছে ৫ কোটিরও বেশি মানুষ। রোববার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, বর্তমানে দেশের ৩৩ শতাংশ মানুষ তথা দেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই এখন নগরে বসবাস করছেন। নগর গবেষণা কেন্দ্রের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শনিবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত ‘নগরায়ণে বাংলাদেশ ও নগর পরিবেশ’ শিরোনামে দিনব্যাপী সম্মেলনে বিশিষ্টজনরা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, মূলত বড় শহরগুলো ছাড়া অন্যত্র নাগরিক সুবিধা তেমন না থাকায় দেশের প্রতিটি এলাকার মানুষ নগরমুখী হচ্ছে। ফলে সেবা সংস্থাগুলো প্রয়োজনীয় নাগরিক সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ অবস্থার অবসানে দ্রুত বিকেন্দ্রীকরণের বিকল্প নেই বলেও মত তাদের।
শহরে আয়ের সুযোগ থাকায় নিুবিত্তদের কেউ কেউ গ্রামাঞ্চল থেকে যেমন শহরমুখী হন, তেমনই স্বাস্থ্য-শিক্ষার মতো সুযোগ-সুবিধা অন্যান্য জেলা শহরে না থাকায় নগর অনেকেরই আকর্ষণ ও প্রয়োজনের জায়গা। নগর গবেষকরা দীর্ঘদিন ‘জাতীয় নগর নীতিমালা’ প্রণয়নের দাবি জানিয়ে এলেও সেটা আলোর মুখ দেখেনি। ঢাকার ক্ষেত্রে বলা যায়, অধিক মানুষ শহরমুখী হওয়ায় অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে একদিকে নগরবাসীকে প্রতিনিয়ত পানি ও বায়ুদূষণ, অধিক তাপমাত্রা, জলাবদ্ধতা, যানজট ও স্বাস্থ্য সংকটের শিকার হতে হচ্ছে; অপরদিকে এত মানুষের সমাগমের কারণে রাজধানীতে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে আর সবুজের পরিমাণ কমছে। ঢাকা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এ শহর একটি উন্মুক্ত বস্তিতে পরিণত হতে চলেছে। প্রতিনিয়ত ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে কৃষিজমি, জলাশয়, লেক ভরাট করে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। এক গবেষণায় উঠে এসেছে, শহরে ২৫ শতাংশ সবুজের প্রয়োজন হলেও ঢাকায় আছে মাত্র ৮ শতাংশ।
বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের সবকিছুই নগরকেন্দ্রিক। এর থেকে বের হতে না পারলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে। ফলে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে বাইরেও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা এবং অবকাঠামো খাতে উন্নয়নের বিকল্প নেই। আবার গ্রাম উন্নয়নে শুধু প্রকল্প গ্রহণ করলেই হবে না, জীবনযাপনে সব প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধাও নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি বিস্তার ঘটাতে হবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের, যেন গ্রামের মানুষ আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়। আবার ঢাকাকেন্দ্রিক নগরায়ণের ফলে সৃষ্ট যানজট, পানি ও বায়ুদূষণের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা ও নীতিও গ্রহণ করতে হবে। টেকসই নগরায়ণ ও শহর বিকেন্দ্রীকরণে যথাযথ বাস্তবায়নে নিতে হবে কার্যকর উদ্যোগ। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছার বিকল্প নেই।