করোনা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ক্ষতিগ্রস্তদের শনাক্ত করে চিকিৎসা প্রদান জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১০ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর এই প্রাণঘাতী ভাইরাস থেকে মুক্তি দিয়েছে কোভিড ভ্যাকসিন বা টিকা। এবার সেই টিকা নিয়ে মানবদেহে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিশ্বকে লকডাউন থেকে বের করে আনার লড়াইয়ে রেকর্ড সময়ের মধ্যে কোভিড ভ্যাকসিন তৈরি করেছিলেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। অনেক দেশেই ব্যবহৃত প্রথম কোভিড ভ্যাকসিন ছিল এই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা। জানা গেছে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অভিযোগ ওঠায় বিশ্বজুড়ে তিনশ কোটির বেশি ডোজ দেওয়ার পর এ টিকা প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, টিকা না-হয় প্রত্যাহার করে নেওয়া হলো, কিন্তু এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের কী হবে? স্বভাবতই এ নিয়ে মানুষ উদ্বিগ্ন। টিকা গ্রহণের ফলে মানবদেহে গুরুতর ক্ষতি হয়েছে, এমনকি মৃত্যুও ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে। ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট অ্যাস্ট্রাজেনেকা বিষয়টি স্বীকারও করেছে। এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এ টিকা গ্রহণের ফলে মানবদেহে ‘থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম’ (টিটিএস) নামে পরিচিত বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। টিটিএস হলো এমন একটি অবস্থা, যার ফলে শরীরের অস্বাভাবিক কোনো জায়গায় রক্ত জমাট বাঁধে এবং রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে যায়। টিটিএসের উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে গুরুতর মাথাব্যথা, পেটে ব্যথা, পায়ে ফোলা ভাব, শ্বাসকষ্ট ও খিঁচুনি। উদ্বেগের কারণ এটাই।
শুধু অ্যাস্ট্রাজেনেকা নয়, করোনার অন্যান্য ব্র্যান্ডের ভ্যাকসিন, যেমন-ফাইজার ও মর্ডানার টিকার বিরুদ্ধেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অভিযোগ উঠেছে। এসব ব্র্যান্ডের টিকা নাকি হৃৎপিণ্ড, মস্তিষ্ক ও রক্তে নানা ধরনের জটিলতা বাড়ায়। অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, মর্ডানা-সব ব্র্যান্ডের টিকাই এদেশে ব্যবহৃত হয়েছে। দেশে শুধু অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকাই দেওয়া হয়েছে ৫ কোটির বেশি ডোজ। অনেকেই এ টিকা একাধিক ডোজ নিয়েছেন। কাজেই পরীক্ষা করে দেখা দরকার দেশে কারা এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত। তাদের চিকিৎসাই বা কী। এ বিষয়ে হেলাফেলার সুযোগ নেই। কিন্তু এখনই নাকি সুনিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় কার কোন্ স্বাস্থ্য সমস্যাটি টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াজনিত। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত না জানব দেশে কার দেহে কতটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না। তবে আমরা এটি নিয়ে কনসার্নড।’ আমরা মনে করি, বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই এ নিয়ে দ্রুত গবেষণা হওয়া উচিত, যাতে টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়। টিকা তৈরিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে এ ব্যাপারে ক্ষতিপূরণ আদায় করা যায় কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখা দরকার।