ট্রেনের শিডিউল লন্ডভন্ড
রেলের রোগ সারানোর কাজটি কি এতই কঠিন?
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৬ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
জয়দেবপুরে দুই ট্রেনের সংঘর্ষ এবং তীব্র দাবদাহের ফলে ট্রেন চলাচলের শিডিউল লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। শনিবার উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় চরম আকার ধারণ করে। বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী ট্রেনের সূচিতে বিপর্যয়ের কারণে বিভিন্ন স্থানে হাজারও যাত্রী চরম দুর্ভোগের মুখে পড়েন। এদিকে অতিরিক্ত তাপমাত্রায় বিভিন্ন স্থানে লাইন বাঁকা হয়ে যাওয়ায় ট্রেন চলছে ধীরগতিতে। এতে যাত্রীরা সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না। শুক্রবার জয়দেবপুরে ট্রেন দুর্ঘটনার পর একটি লাইন শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বন্ধ ছিল। ফলে একটি লাইন দিয়ে স্বল্পগতিতে ট্রেন যাতায়াত করেছে। শনিবার ছিল ট্রেনে নতুন ভাড়া বৃদ্ধির প্রথম দিন। রেল কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি ছিল ভাড়া বৃদ্ধির সঙ্গে সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। অথচ আগের চেয়ে বেশি দামে টিকিট কিনে প্রথম দিনই যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। জয়দেবপুরে শুক্রবার ট্রেন দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজে ধীরগতি লক্ষ করা গেছে। ঢাকা থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন সেখানে পৌঁছেছে শুক্রবার বিকালে। লাইনচ্যুত ট্রেন লাইন থেকে সরানো হয় শনিবার বেলা ১১টার দিকে। এরপর লাইন মেরামত করে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করতে আরও কয়েক ঘণ্টা লেগে যায়। জানা যায়, উদ্ধারকারী ট্রেনগুলো অনেক পুরোনো। তাই উদ্ধারকাজে সময় লাগে বেশি। এ ধরনের ট্রেন সংখ্যায়ও কম। এসব সীমাবদ্ধতা কাটানোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
দেশে ঘন ঘন ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটছে, এটি উদ্বেগজনক। শনিবার সিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম রেলস্টেশনে এক লাইনে বিপরীতমুখী দুটি ট্রেন চলে আসে। তবে চালকদের তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তায় অল্পের জন্য ট্রেন দুটির যাত্রীরা রক্ষা পান। রেলের কর্মীদের অবহেলাজনিত ট্রেন দুর্ঘটনার বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দেশে রেলকর্মীদের অবহেলার কারণে বারবার ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটছে। ট্রেনের লাইনচ্যুতি, ভুল সিগন্যাল, কর্মীদের দায়িত্বে অবহেলা-এসব অনেকটা নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
গত দেড় দশকে রেলে বিপুল অঙ্কের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও রেলের জরাজীর্ণ লাইন ও সেতু উন্নয়নে বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে না। জীর্ণ রেল সেতু দিয়ে বছরের পর বছর ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ট্রেন। অভিযোগ রয়েছে, আমাদের দেশে সড়ক পরিবহণ ব্যবসায়ীদের স্বার্থে একটি মহল কাজ করে যাচ্ছে। বস্তুত দুর্নীতির কারণে রেলের রুগ্ণ দশা কাটছে না। কাজেই এ সংস্থার সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। রেল যাতে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারে, সেজন্য নিতে হবে যথাযথ পদক্ষেপ।