ফাইন্যান্স কোম্পানির দুর্দশা: দ্রুত উত্তরণের পথ খোঁজা দরকার
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশের ব্যাংক খাতের পাশাপাশি ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোও (আর্থিক প্রতিষ্ঠান) জাল-জালিয়াতির নেতিবাচক প্রভাবসহ বিভিন্ন কারণে আর্থিক দুরবস্থায় পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জুলাই-সেপ্টেম্বরের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এসব কোম্পানির দুর্দশার চিত্র বেরিয়ে এসেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, হাতেগোনা কয়েকটি বাদে বেশিরভাগ ফাইন্যান্স কোম্পানির তহবিল সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। আস্থার সংকটে পড়ে এদের আমানত বাড়ার হার যেমন কমেছে, তেমনি কমেছে ব্যাংক বা অন্য ফাইন্যান্স কোম্পানি থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ। ফলে সম্পদ ও মূলধন থেকে আয় কমতে কমতে কোম্পানিগুলো এখন লোকসানের মুখে পড়েছে। তাদের সম্পদ ও দেনার মধ্যকার ব্যবধান বেড়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক, এসব কোম্পানির সম্পদের পরিমাণ গ্রাহকের আমানতের পরিমাণের চেয়েও কমে গেছে। এ পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক।
উল্লেখ করা যেতে পারে, ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর ব্যবসার জন্য যে তহবিলের প্রয়োজন হয়, তার প্রধান উৎস চারটি। এগুলো হলো-ধার, আমানত, মূলধন ও অন্যান্য। এর মধ্যে জুনের তুলনায় সেপ্টেম্বরে ব্যাংক বা অন্য কোম্পানি থেকে ধারের স্থিতি ২৮ হাজার ৫১২ কোটি টাকা থেকে কমে ২৭ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আস্থার সংকটে তাদের এখন আর কেউ নতুন করে ধার দিতে চাচ্ছে না; বরং দুর্বল কোম্পানি থেকে আগে দেওয়া ধার তুলে নিচ্ছে। এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও তুলে নিচ্ছে আমানত। এ অবস্থায় মূলধন কমে যাওয়ায় ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতা কমেছে।
ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর অবস্থা কেন এমন দুর্দশাগ্রস্ত হলো, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত তা নিবিড়ভাবে পরিদর্শন ও পর্যালোচনা করে চিহ্নিত করা এবং এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সেই সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের যাতে তাদের টাকা ফেরত পেতে ভোগান্তির শিকার হতে না হয়, সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, মানুষ সঞ্চয় করে মূলত লাভের আশায়। এখন প্রত্যাশিত লাভের গুড় শুধু নয়, আসলও যদি পিঁপড়ায় খায়, তাহলে সরকার অনুমোদিত এসব ফাইন্যান্স কোম্পানির প্রতি মানুষের আস্থা শূন্যের কোঠায় নেমে যাবে; পরিণামে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি, যা মোটেই কাম্য নয়।
বস্তুত জাল-জালিয়াতি, অনিয়ম, মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ-এসব কারণেই ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর আজ এই দুর্দশা। দেখা যাচ্ছে, দেশের ব্যাংক খাত ‘ঋণ অনিয়মের’ যে বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে, ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোও তা থেকে মুক্ত নয়। ঋণ বিতরণে রাজনৈতিকসহ নানা ধরনের প্রভাব, ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম, সুশাসনের অভাব ইত্যাদির ভূত ব্যাংকগুলোর মতো ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর ওপরও ভর করেছে, যা তাদের আস্থার সংকট বাড়িয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানগুলোয় সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং গ্রাহকদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক দ্রুত বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ খুঁজবে, এটাই প্রত্যাশা।