প্রক্সি আত্মসমর্পণ!
কীভাবে ঘটল এমন জালিয়াতির ঘটনা?
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মাদক মামলার আসামির বদলে জালিয়াতি করে অন্য ব্যক্তির জেল খাটার অভিনব এক ঘটনা উদ্ঘাটিত হয়েছে। জানা যায়, ২০২০ সালের আগস্টে উত্তরার একটি বাসায় অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল, গাঁজাসহ আটক করা হয় আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে। তবে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন মাদকচক্রের মূল হোতা উত্তরার ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসান। এ ঘটনায় দুজনকে আসামি করে মামলা করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। বিচারে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় পলাতক ওই ব্যক্তিকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। এরপর ২০২৩ সালের ৯ আগস্ট নাজমুল হাসান পরিচয় দিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন গাজীপুরের মিরাজুল ইসলাম। এর মধ্যে সাত বছরের কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। আপিল শুনানির শেষ পর্যায়ে বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ চেয়ে বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। এরপর আদালতে আবেদন জানালে ১৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। এ অবস্থায় নিম্ন আদালতের এক আইনজীবী বিষয়টি প্রধান বিচারপতির নজরে আনেন। তখন প্রধান বিচারপতি আপিল নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের বেঞ্চে পাঠান। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বিচারক, আইনজীবী ও কারা কর্মকর্তার কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছেন হাইকোর্ট।
বলার অপেক্ষা রাখে না, জালিয়াতি করে প্রকৃত ব্যক্তির বদলে অন্য ব্যক্তির জেল খাটার বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এর ফলে প্রকৃত আসামি ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। এ ধরনের ঘটনা আদালতের ভাবমূর্তির জন্যও ক্ষতিকর। প্রশ্ন হলো, সংশ্লিষ্টদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল? আসামিকে কী প্রক্রিয়ায় গ্রহণ করা হয়েছে, তার প্রমাণপত্র-হলফনামাসহ বিস্তারিত জানা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে হাইকোর্ট যে ব্যাখ্যা চেয়েছেন, সংশ্লিষ্টরা তার কী জবাব দেন, তা দেখার অপেক্ষায় রইলাম আমরা। যে বা যারাই এ ঘটনার জন্য দায়ী হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে এমন ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি কখনো না হয়। সেই সঙ্গে মাদক মামলার মূল হোতা নাজমুল হাসানকে দ্রুত গ্রেফতারের পদক্ষেপ নেওয়াও জরুরি। তার পরিচয়ে অন্য এক ব্যক্তি কেন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন, সেটাও উদ্ঘাটিত হওয়া প্রয়োজন।