Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

কেমিক্যাল গুদাম স্থানান্তর, আদৌ বাস্তবায়ন হবে কি?

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কেমিক্যাল গুদাম স্থানান্তর, আদৌ বাস্তবায়ন হবে কি?

নিমতলী ট্র্যাজেডি ও পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক প্রাণহানির প্রেক্ষাপটে পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গুদাম স্থানান্তরে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত না হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক।

দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও কেন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি, তা তদন্ত করার জন্য জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তা না হলে ভয়াবহ ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা থেকেই যায়।

জানা যায়, পুরান ঢাকার প্রায় ২ হাজার কেমিক্যাল গুদামের বিপরীতে শ্যামপুরে অস্থায়ীভাবে মাত্র ৫৪টি গুদাম প্রস্তুত হয়েছে। তবে সেখানে এখন পর্যন্ত যাননি কোনো ব্যবসায়ী। পাশাপাশি টঙ্গীতে আরও ৫৩টি অস্থায়ী গুদাম তৈরির কাজ চলমান।

এছাড়া মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে স্থায়ীভাবে ৩০০ একর জায়গায় কেমিক্যালপল্লি তৈরির কাজও চলছে ধীরগতিতে। বস্তুত দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর কার্যকর তৎপরতা না থাকায় কেমিক্যাল গুদাম স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, পুরান ঢাকার মিটফোর্ড ও চকবাজারে সাধারণ পণ্যের মতোই অবাধে বিক্রি হচ্ছে দাহ্য ও বিপজ্জনক বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল। এসব মার্কেট থেকে যে কেউ চাইলে যে কোনো ধরনের কেমিক্যাল কিনতে পারেন। কিছুসংখ্যক ব্যবসায়ী, ভবন মালিকের অদূরদর্শিতার কারণেই কেমিক্যাল গুদাম স্থানান্তরে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।

লক্ষ করা যাচ্ছে, দেশে বড় কোনো দুর্ঘটনা বা দুর্যোগ হলেই শুধু তৎপর হয়ে ওঠেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা। গঠিত হয় নানা কমিটি। এরপর দেওয়া হয় একের পর এক সুপারিশ ও নির্দেশনা। সেসব কেন বাস্তবায়িত হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার।

নিমতলী ট্র্যাজেডির পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ প্রদান করেছিল। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় নিমতলীর ঘটনার ৯ বছর পর চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বহু মানুষ প্রাণ হারান। প্রশ্ন হলো, আর কত দুর্ঘটনার পর কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে।

কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, আর কালক্ষেপণ নয়। পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গুদাম স্থানান্তরে যা যা করণীয়, দ্রুত সেসব পদক্ষেপ নিন। রাসায়নিক কারখানাগুলো সরিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সার্বিক পুনর্বাসনের প্রশ্নটিও জড়িত। এর সঙ্গে মানুষের জীবিকার প্রশ্ন সম্পর্কিত। কাজেই পুনর্বাসনের কাজটি করতে হবে যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে।

হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্প সাভারে সরিয়ে নেওয়ার পর সেখানে নতুন করে নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রেও যাতে এমনটি না ঘটে, কর্তৃপক্ষকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গুদামগুলো যেখানেই স্থানান্তর করা হোক না কেন, অগ্নিদুর্ঘটনা কমাতে হলে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোর ট্র্যাজেডি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কোনো অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে কেমিক্যালের সংশ্লিষ্টতা থাকলে গতানুগতিক পদ্ধতিতে অগ্নিনির্বাপণে সাফল্য আসবে না। এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে কী করণীয় তা মানুষকে জানাতে হবে।

বস্তুত দুর্ঘটনা এড়াতে দেশের সব আবাসিক এলাকা থেকে কেমিক্যালসংশ্লিষ্ট কারখানা ও গোডাউন স্থানান্তরের বিকল্প নেই। কেমিক্যাল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে সরকারের অনেক সিদ্ধান্ত কার্যকরে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়। জনস্বার্থে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক নেতাদের আন্তরিকতার পরিচয় দিতে হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম