এলআর ফান্ডের নামে অর্থ সংগ্রহ
এটি চাঁদাবাজিরই নামান্তর
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অভ্যন্তরীণ বাড়তি ব্যয়ের সংস্থানে মাঠ প্রশাসনের কর্তারা এলআর (লোকাল রিলেশন্স) ফান্ডের নামে নিরীক্ষাবিহীন অর্থ সংগ্রহ করে থাকেন। যেমন সরকারি বিধিবিধান অনুযায়ী, মন্ত্রী থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জেলা-উপজেলা সফরে গেলে পৃথকভাবে থাকা-খাওয়ার জন্য দৈনিক ভাতা পান তারা। নিয়ম অনুযায়ী, ওই টাকা দিয়ে তাদের ব্যয় মেটানোও হয়। তবে সফরসঙ্গী ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের থাকা-খাওয়ার বাড়তি যে ব্যয়, তা মেটানো হয় এ এলআর তহবিল থেকে। রোববার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, এ ফান্ডের নামে মাঠ পর্যায়ে রীতিমতো চাঁদাবাজি চলছে। মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের ইচ্ছার ওপরই এ তহবিলের অর্থ সংগ্রহ ও তা খরচ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা যায়, শিল্পকারখানা তো আছেই, অন্যান্য খাতের বড় ব্যবসায়ীরাও এ চাঁদাবাজির হাত থেকে রেহাই পান না। বিশেষ দিবস ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের নামে দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের বেপরোয়া এ চাঁদাবাজি অনেকটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। চাপা ক্ষোভ থাকলেও বিপদের আশঙ্কায় এ নিয়ে অভিযোগ দূরের কথা, প্রকাশ্যে মুখ খুলতেও নারাজ ভুক্তভোগীরা। তারা বলছেন, প্রশাসনকে এ চাঁদা বা ‘অনুদান’ না দিলে নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালানো কঠিন হয়ে যায়। অনুদান হিসাবে যে পরিমাণ অর্থ দিতে হয়, তা-ও কম নয়। অভিযোগ আছে, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আপ্যায়নে এ তহবিল থেকে যতটা ব্যয় হয়, তার অনেকগুণ বেশি কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত কাজে খরচ দেখিয়ে লোপাট করেন। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের অক্টোবরে জাতীয় সংসদে একটি বিল পাশের সময় দেওয়া বক্তব্যে সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এ তহবিলকে চাঁদাবাজি বলে মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘এলআর ফান্ড কোথা থেকে আসে? এগুলো লোকালি রেইজড। জনগণের পকেট থেকে আসে। ব্যবসায়ীদের ডাকা হয়। তারা কাঁপতে কাঁপতে ডিসির কাছে চলে আসেন। দিস ইজ এক্সটরসন (এটা চাঁদাবাজি)।’
বলা বাহুল্য, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এ তহবিলের ভিত্তি ও স্বচ্ছতা নিয়ে বেশ আগেই প্রশ্ন তুলেছিল। অবশ্য সাবেক এক মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আপ্যায়নে এ ধরনের তহবিল সংগ্রহের সংস্কৃতি নতুন নয়। চাঁদা তুলেই এ খরচ করা হয়। এলআর ফান্ড তোলার জন্য সরকারি অনুমোদন আছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই এমনটি হয়ে থাকে। তবে তা কাউকে জুলুম করে নয়, সমঝোতার ভিত্তিতেই অর্থ সংগ্রহ হয়ে থাকে বলে দাবি তাদের।
আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের চাঁদাবাজি গ্রহণযোগ্য নয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এলআর ফান্ড গঠনের উদ্দেশ্য মহৎ থাকলেও বর্তমানে এ তহবিল ঘিরে চাঁদাবাজির যে অভিযোগ উঠছে, তা উদ্বেগজনক। এটা প্রশাসনের জন্য অপমানজনকও বটে। যে পরিপ্রেক্ষিতে এ তহবিল গঠন করা হয়েছিল, সেই প্রেক্ষিতের আমূল পরিবর্তন হয়ে গেছে। ফলে আদৌ এর প্রয়োজন আছে কিনা তা বিবেচনায় নিয়ে এ তহবিল আইন করেই বন্ধ করে দেওয়া উচিত। কারণ, কিছুসংখ্যক কর্মকর্তার অপকর্মের দায় পুরো প্রশাসনের ওপর চাপবে, তা কাক্সিক্ষত নয়। এর ফলে প্রশাসনিক কাঠামোর ওপর মানুষের আস্থার সংকট দেখা দেবে।