সুখী দেশের সূচকে অবনমন
জীবনকে সহজ ও সুন্দর করতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট ২০২৪’ অনুযায়ী, বিশ্বের সুখী দেশের তালিকায় গত বছরের চেয়ে ১১ ধাপ পিছিয়ে ১৪৩ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান হয়েছে ১২৯তম। বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ হিসাবে বিবেচিত হয়েছে ফিনল্যান্ড। আর সবচেয়ে কম সুখী দেশ আফগানিস্তান। প্রশ্ন হলো, সুখী দেশের মানদণ্ড কী? যারা এ তালিকা তৈরি করেছে, তারা নিশ্চয়ই কিছু মানদণ্ডের ভিত্তিতেই তা করেছে। যেমন, ধরে নেওয়া যায় আফগানিস্তানে ক্ষমতার পালাবদলে দেশটিতে এক গভীর মানবিক সংকট বিরাজ করছে। অন্যদিকে শীর্ষ সুখী দেশ ফিনল্যান্ডের একজন গবেষক বলেছেন, দেশটির মানুষের এতটা সুখী হওয়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রকৃতির সঙ্গে তাদের নিবিড় সান্নিধ্য, স্বাস্থ্যসম্মত কর্মজীবন ইত্যাদি। এর বিপরীতে বলা যায়, বাংলাদেশ একটি দূষণকবলিত রাষ্ট্র; এখানে মানুষের মনে নিরাপত্তাবোধ কম, কারণ সড়ক দুর্ঘটনাসহ নানা ধরনের অপঘাতে মৃত্যুর হার বেশি। অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত নানা উন্নয়ন ঘটলেও রয়েছে ব্যাপক বৈষম্য। এ বৈষম্যের কারণেই অসুখী মানুষের সংখ্যা বেশি ধরে নেওয়া হয়। রয়েছে নানা সামাজিক সমস্যা। ফলে মানুষের মনে সুখের অনুভূতি কম।
বস্তুত সুখ একটি অনুভূতির বিষয়। অনেক ক্ষেত্রে আনন্দ, তৃপ্তি বা উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই সুখের বহিঃপ্রকাশ এভাবে নাও ঘটতে পারে। প্রকৃতপক্ষে মানুষ কীসে সুখী হবে আর কীসে হবে না, তা একটি আপেক্ষিক বিষয়। জৈবিক, মনস্তাত্ত্বিক নানা বিষয় এর সঙ্গে জড়িত। তাই সঠিকভাবে সুখ পরিমাপ করা বা সুখের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা অত্যন্ত কঠিন। তবে সাধারণভাবে ধরে নেওয়া যায়, মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো অর্থাৎ খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বাসস্থানের অভাব নেই যার, উপরন্তু জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা আছে, সে একজন সুখী ব্যক্তি।
বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নয়নে মানুষের জীবনযাপন অনেক সহজ হয়েছে বটে। তবে এর নেতিবাচক দিকও রয়েছে। সম্প্রতি এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে, পাশ্চাত্যে ৩০ বছরের কম বয়সিরা আগের প্রজন্মের চেয়ে কম সুখী। এর কারণ হিসাবে সামাজিক প্লাটফর্মগুলোকে দায়ী করছেন অনেকে। বর্তমানে তরুণরা দিনরাতের একটি বড় সময় সামাজিক মাধ্যমে কাটায়। অনেকেই বিভিন্ন ডিভাইস নিয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত জেগে থাকে। এগুলো তাদের মনস্তত্ত্বে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ পরিস্থিতি থেকে আমাদের তরুণ-তরুণীরাও মুক্ত নয়। এটা সুখ নাকি অসুখ, তা মনস্তত্ত্ববিদরাই বলতে পারবেন।