ফুটপাতে চাঁদাবাজি নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য না কমার বিষয়টি উদ্বেগজনক। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাত দখলের পর সড়কের অংশবিশেষ দখল করে দোকান বসানোর কারণে পথচারীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সড়ক ডিভাইডার, এমনকি ফুট ওভারব্রিজের ওপরও বসানো হয়েছে দোকান। আর সেসব দোকান ঘিরেই চলে চাঁদাবাজি। রাজধানীর ফুটপাতের দোকানগুলো থেকে বছরে নেওয়া হচ্ছে কোটি টাকার চাঁদা। পুলিশের নাকের ডগায় বছরের পর বছর ধরে চলছে এ বাণিজ্য। অথচ পুলিশের ভূমিকা ও বক্তব্য বরাবরই রহস্যজনক। হকার্স সংগঠনগুলোর দাবি, রাজধানীতে প্রায় দুলাখ হকারের ওপর চাঁদাবাজি করেন অন্তত দুশতাধিক লাইনম্যান। অভিযোগ রয়েছে, কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতারা মিলেমিশেই রাজধানীর ফুটপাতের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করেন। জানা যায়, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কিছু নেতা এদের প্রধান শক্তি, যারা গডফাদার হিসাবে পরিচিত। এছাড়া চাঁদার টাকা যায় পুলিশ, মস্তান এবং এলাকাভিত্তিক কিশোর গ্যাংয়ের হাতে। রাজধানীর ফুটপাত চাঁদাবাজির এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে যুগান্তরের সরেজমিন অনুসন্ধানে। জানা যায়, কেউ কেউ ফুটপাতে চাঁদাবাজির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত থেকে কেউ কেউ বিপুল অর্থের মালিকও হয়েছেন।
সম্প্রতি পুলিশ মহাপরিদর্শক চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, কোনো ধরনের চাঁদাবাজি বরদাশত করা হবে না। তিনি বলেছেন, সব ধরনের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রাজধানীর একটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেছেন, ‘প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার আমরা ফুটপাতের দোকান অপসারণ করি। যখনই একদিক থেকে অন্যদিকে চলে যাই তখন হকাররা আবার বসে। সব সময় তো অভিযানের ওপর থাকা যায় না।’
লক্ষ করা যায়, ঈদ সামনে রেখে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাঁদাবাজির লাগাম ছাড়িয়ে যায়। মূলত ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কিছু নেতার আশীর্বাদেই চলে এ চাঁদাবাজি। বস্তুত ফুটপাতে হকাররা বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসায় অনেক পথচারী মূল সড়কের ওপর দিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হন। অবৈধভাবে ফুটপাত দখল করায় যানজটসহ সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে আরও নানা বাধা। চাঁদাবাজির কারণে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগও দীর্ঘদিনের। আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর কেউ চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত কিনা, কর্তৃপক্ষকে তাও খতিয়ে দেখতে হবে। প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধে কর্তৃপক্ষকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে সারা বছরই নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করবে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবৈধ চাঁদাবাজির সঙ্গে কেবল বিশেষ কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠীই যে জড়িত, বিষয়টি এমন নয়, বরং চাঁদাবাজির শেকড় দেশজুড়ে বিস্তৃত। বস্তুত চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির জন্য মূলত দায়ী রাজনীতির বর্তমান ধারা। লেজুড়বৃত্তির রাজনীতির কারণে বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের দৌরাত্ম্য কতটা বেড়েছে তা বলাই বাহুল্য। চাঁদাবাজরা কৌশলে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে। কাজেই কোনো চাঁদাবাজ যাতে রাজনীতিকদের পৃষ্ঠপোষকতা না পায়, তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতাদের জোরালো পদক্ষেপ প্রয়োজন। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি। অভিযোগ রয়েছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোনো কোনো সদস্যও চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত। কাজেই দেশে সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধে প্রশাসনিকভাবেও জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।