কুমিল্লায় ট্রেন দুর্ঘটনা
রেলযাত্রাকে নিরাপদ করতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সাশ্রয়ী, নির্ঝঞ্ঝাট ও নিরাপদ হওয়ায় অনেক যাত্রীই ট্রেনকে পছন্দের মাধ্যম হিসাবে বেছে নেন। তবে প্রায় সময়ই নানা ধরনের দুর্ঘটনা ট্রেনযাত্রাকে যেন ক্রমেই অনিরাপদ করে তুলছে। রোববার দুপুর পৌনে ২টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা জামালপুরগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের ৯টি বগি কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের হাসানপুর রেলস্টেশনের কাছে লাইনচ্যুত হয়। জানা যায়, এরপরও চালক ইঞ্জিনটিকে রেলস্টেশন পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার নিয়ে যান। এতে রেললাইন দুমড়ে-মুচড়ে যায়, লাইনচ্যুত বগিগুলো আশপাশের মাঠে ও বাসাবাড়িতে গিয়ে পড়ে।
এ সময় ট্রেনের ১৫ যাত্রী আহত হন। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত বছরের এপ্রিলে প্রায় একই স্থানে ভুল সিগন্যালের কারণে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী আন্তঃনগর সোনার বাংলা এক্সপ্রেস মালবাহী একটি ট্রেনকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে সেটি উলটে যায় এবং যাত্রীবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনসহ ছয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়।
এতে আহত হন অন্তত ৫০ জন। পরিতাপের বিষয়, রেল মন্ত্রণালয় আলাদা গঠন করা হলেও এতে বিশেষ কোনো লাভ হয়নি। লাগামহীন দুর্নীতি ছাড়াও নানা ধরনের অব্যবস্থাপনার আবর্তে নিমজ্জিত রেলওয়ে মানুষের প্রত্যাশার বিষয়গুলো আমলে নিচ্ছে না। বস্তুত তারা সাধারণ মানুষের পছন্দ ও চাহিদাকে কাজে লাগাতে পুরোপুরি ব্যর্থ তো হয়েছেই; উপরন্তু যাত্রীসাধারণের জীবন অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে-গত রোববারের দুর্ঘটনা ছাড়াও প্রায়ই নানা ধরনের দুর্ঘটনা, অরক্ষিত লেভেলক্রসিংসহ বিভিন্ন ঘটনায় এর প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।
ভুলে গেলে চলবে না, দেশে প্রচলিত যোগাযোগব্যবস্থাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হলো রেলওয়ে খাত। অথচ দুর্নীতি ও গোষ্ঠীস্বার্থের কারণে এ সম্ভাবনাকে আমরা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছি। ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঘটতে থাকলে ট্রেন ভ্রমণে মানুষের নিরাপত্তাবোধে যে চিড় ধরবে, তা বলাই বাহুল্য। কাজেই দুর্ঘটনার কারণগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে অবিলম্বে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। প্রতিটি দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় বটে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব কমিটির রিপোর্ট আলোর মুখ দেখে না। রিপোর্ট প্রকাশ করা হলেও এর সুপারিশগুলো কমই আমলে নেওয়া হয়। এদিকটিতেও দৃষ্টি দেওয়া দরকার।
আমরা দেখছি, দেশে অধিকাংশ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে চালক, গার্ড, স্টেশন মাস্টারসহ সংশ্লিষ্টদের ভুলের কারণে। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চালানোর কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে। লাইনের সংস্কার সময়মতো করা হয় কি না, তা নিয়েও রয়েছে বড় ধরনের প্রশ্ন। আবার লাইনে পাথর না থাকা, সিগন্যাল ব্যবস্থার ত্রুটি, লাইন ক্ষয়, স্লিপার নষ্ট, লাইন ও স্লিপার সংযোগস্থলে লোহার হুক না থাকা ইত্যাদি কারণেও দুর্ঘটনা বেড়েছে।
কাজেই এসব দিকে জরুরি ভিত্তিতে নজর দেওয়া দরকার। রেলযাত্রাকে প্রকৃতই নিরাপদ করতে বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। মনে রাখা দরকার, একেকটি ট্রেন দুর্ঘটনায় জানমাল তো বটেই, রেলওয়েরও প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। তাই রেলযাত্রাকে নিরাপদ করতে সরকার দক্ষ জনবল নিয়োগ, লাইনগুলোর সংস্কার এবং নতুন ইঞ্জিন যুক্ত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।