ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থাপনা, আগে প্রয়োজন সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানী হলেও ঢাকা শহরের যানবাহন চলাচলে নেই কোনো স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থাপনা। দেড় কোটিরও বেশি মানুষের এ শহরে যানজট যেমন বিশৃঙ্খল ছিল, তেমনই রয়ে গেছে। কিছু ক্ষেত্রে এটি আরও খারাপ হয়েছে।
যদিও এক সময় নগরীতে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থাপনা বেশ ভালোভাবেই প্রতিপালিত হয়েছে। অবশ্য পরবর্তী সময়েও এ ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে অদূরদর্শিতার কারণে তা সফল হয়নি।
শনিবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-ভুল পথে ঢাকার ইন্টারসেকশনের ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থাপনার কাজ করায় গত প্রায় দুই দশকে সরকারের অপচয় হয়েছে ৩০২ কোটি টাকা। তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়নে ১৮২ কোটি টাকা এবং এক দশকে ট্রাফিক সিগন্যালের বিদ্যুৎ বিল বাবদ খরচ হয়েছে ১২০ কোটি টাকা। ট্রাফিক সিগন্যাল প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পরিচালন খাতে বিপুল অর্থ খরচের পরও কোনো সুফল মেলেনি। এরপরও রাজধানীতে নতুন ছয়টি ইন্টারসেকশনের স্মার্ট ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে রাজধানীর যানজট নিরসনে ট্রাফিক সিগন্যাল কার্যকরের জন্য পদক্ষেপ নিতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেওয়ার কথা জানান। প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনার পর ট্রাফিক সিগন্যালের বিষয়টি ফের আলোচনায় আসে। আমরা মনে করি, এবারের উদ্যোগটি যেন আগের মতো যেনতেন না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। সমস্যার মূলে হাত দিয়ে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে, নইলে সরকারি অর্থের ফের অপচয়ই ঘটবে। মনে রাখতে হবে, এ শহরের আয়তনের তুলনায় সড়কের পরিমাণ কম। অন্যদিকে চলাচল করে তিন থেকে চারগুণ যানবাহন। যানবাহনের শ্রেণিও বেশি। এই বিশৃঙ্খলা নিরসন ছাড়া ইন্টারসেকশনে ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থাপনার কোনো উদ্যোগ সফল হবে না। শহরের যানবাহনের চাহিদা ইন্টারসেকশনের সক্ষমতার চেয়ে বেশি হলে সেখানে অটোমেশন ট্রাফিক সিগন্যাল সফল হয় না। বর্তমানে ঢাকার ইন্টারসেকশনের সক্ষমতার চেয়ে তিন থেকে চারগুণ বেশি যানবাহন রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের কোনো শহরেই সফলতা মিলবে না।
মনে রাখতে হবে, সিগন্যাল সর্বরোগের ওষুধ নয়। ঢাকা শহরের ১৮ থেকে ২০ ধরনের যানবাহন চলাচল করে। এর মধ্যে ধীরগতির যানবাহন যেমন আছে, তেমনি দ্রুতগতির যানবাহনও রয়েছে। এটা বড় ধরনের বিশৃঙ্খলার কারণ। সিগন্যাল বাতি জ্বলার সময় একই গতিতে সবাইকে ওই ইন্টারসেকশন পার হতে হবে। কাজেই যখন সিগন্যাল কাজ করবে না, তখন গ্রেট সেপারেশনে যেতে হবে, নাকি অন্য কোনো কার্যকর পথ অবলম্বন করতে হবে, কাজ শুরুর আগে সেসব বিষয়ও যাচাই করতে হবে। কেবল অবকাঠামোগত প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দিলেই হবে না। এসব প্রকল্প আদতেই প্রয়োজন রয়েছে কিনা, সময়োপযোগী কিনা, কার্যকর হবে কিনা, এ থেকে জনসাধারণ সুফল পাবে কিনা-এসব বিষয়ও বিবেচনায় রাখতে হবে। বিস্তারিত সমীক্ষা ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ ছাড়া খণ্ড খণ্ড উদ্যোগে কখনোই সফলতা মিলবে না। পরিতাপের বিষয়, ঢাকার যানজট নিরসন বা গণপরিবহণ সংকটের সমাধানে আজও ভালো মানের কোনো সমীক্ষা হয়নি। সেটি হলে নিশ্চয়ই এ ধরনের প্রকল্প কার্যকর করা অনেকটাই সহজ হতো। অটোমেশন পদ্ধতিতে যাওয়ার আগে রাজধানীর সড়কগুলোয় বিশৃঙ্খলার মূল কারণ চিহ্নিত করে তা সমাধানে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।