সড়ক পরিবহণ আইন সংশোধন: পরিবহণ নেতাদের দাবিকে নয়, জনস্বার্থকে গুরুত্ব দিন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বুধবার ‘সড়ক পরিবহণ (সংশোধন) আইন-২০২৪’-এর খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এতে সড়ক পরিবহণ আইনের দুটি ধারা অজামিনযোগ্য থেকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে এবং ১০টি ধারায় জরিমানার বিধান কমানো হয়েছে। বস্তুত সংশোধিত আইনটি অনুমোদনের মাধ্যমে অপরাধীর সাজা কমানো হয়েছে। এ সংশোধনী দেশে বিদ্যমান বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার উদ্বেগজনক। প্রতিদিনই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। এ কারণে সড়কে নিরাপত্তা বিধানে কঠোর আইনই কাম্য। অথচ আইনটি আরও শিথিল বা দুর্বল করা হচ্ছে। বস্তুত এক্ষেত্রে পরিবহণ নেতাদের দাবিকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এটি দুর্ভাগ্যজনক।
দেশে সড়ক দুর্ঘটনা উদ্বেগজনক মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায় একটি যুগোপযোগী সড়ক পরিবহণ আইনের জনদাবি ছিল দীর্ঘদিনের। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হলে নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারা দেশে রাস্তায় নেমে আসে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তড়িঘড়ি করে পাশ করা হয় সড়ক পরিবহণ আইন। এরপর আইনটির বেশ কয়েকটি ধারা সংশোধনের দাবিতে আন্দোলনে নামেন পরিবহণ মালিক-শ্রমিকরা। এ কারণে আটকে থাকে আইনটির কার্যকারিতা। উল্লেখ্য, তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে-সড়ক পরিবহণ আইনের সব ধারা জামিনযোগ্য করা, সড়ক দুর্ঘটনায় শ্রমিকের অর্থদণ্ড পাঁচ লাখ টাকার বিধান বাতিল করা, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি করা ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এসব দাবি মেনে নিলে সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বাড়বে।
লক্ষ করার বিষয়, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরও দেশের সড়ক-মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। বলা যায়, সড়ক দুর্ঘটনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ বাস্তবতায় দুর্ঘটনা রোধে সরকারের কঠোর ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি। সেক্ষেত্রে প্রথমেই সড়ক পরিবহণ আইনটি হওয়া দরকার কঠোর। এরপর আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। যেহেতু এর সঙ্গে জনস্বার্থের প্রশ্ন জড়িত, তাই আমরা আশা করব, পরিবহণ নেতাদের দাবিকে নয়, বরং জনস্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে সংশোধনীগুলো পুনর্বিবেচনা করে আইনটি চূড়ান্ত করবে সরকার।