Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

বিপজ্জনক ও অপরিকল্পিত রাজধানী

রাজউক কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিপজ্জনক ও অপরিকল্পিত রাজধানী

সাধারণত ভয়াবহ কোনো দুর্ঘটনার পরই রাজধানীর বহু ভবনের নকশার ত্রুটিবিচ্যুতি ও ঝুঁকিপূর্ণের বিষয়টি আলোচনায় আসে। জানা যায়, রাজধানীর অনুমোদিত ভবনগুলোর মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ নকশায় বিচ্যুতি করা হয়েছে। কোনো ভবনের চারপাশের খালি জায়গা না ছেড়ে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। আবার কোথাও ফায়ার এক্সিট রাখা হয়নি। কেউবা অনুমোদনের বাইরে নিজেদের ইচ্ছামতো ভবন ব্যবহার করছেন। অনুমোদনের চেয়ে বেশি তলা নির্মাণের ঘটনাও ঘটছে অহরহ। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, বছরের পর বছর এসব বিচ্যুতি হলেও তা প্রতিরোধে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কার্যকর উদ্যোগ নেই। বস্তুত এসব কারণে রাজধানীর বহু ভবন অনিরাপদ হয়ে উঠছে। একের পর এক দুর্ঘটনায় কিছুদিন পরপর প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। কোনো ভবনের নকশা অনুমোদনের পর এটি যথাযথ নিয়ম মেনে নির্মাণ করা হচ্ছে কি না, তা দেখভালের দায়িত্বও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক)। এ সংস্থার মাঠ পর্যায়ের পরিদর্শকদের দায়িত্ব ভবন নির্মাণকাজ সরেজমিন পরিদর্শন করে নকশা অনুযায়ী বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করা। আইনে এমনটি থাকলেও রাজউক তা বাস্তবায়ন করছে কি না, এটি এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। নকশার বিচ্যুতি ঘটিয়ে যারা ভবন নির্মাণ করে, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হলে অন্যরাও সতর্ক থাকত।

সরেজমিন পরিদর্শন করে নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ বাস্তবায়ন করা যাদের কাজ, তাদের কারও কারও দুর্নীতির বিষয়টি বারবার আলোচনায় আসে। বস্তুত এককভাবে কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীর পক্ষে দুর্নীতি করে পার পাওয়া কঠিন। আমরা মনে করি, এ সংস্থার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা সহযোগিতা করে থাকে, তাদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনা দরকার। জানা যায়, ‘গ্রিনকজি কটেজ’ ভবনের নিচতলা থেকে পাঁচতলা পর্যন্ত অফিস হিসাবে ব্যবহার করার কথা। আর ওপরের দুই তলা আবাসিক হিসাবে ব্যবহার করার কথা। কিন্তু নির্মাণের পর ভবন বা স্পেসের মালিকরা অনুমোদনের শর্ত লঙ্ঘন করেছেন; অফিস ও আবাসিকের পরিবর্তে ওই ভবনে তারা রেস্টুরেন্ট ব্যবসা পরিচালনা করছেন। দুঃখজনক হলো, অগ্নিনির্বাপণের শর্তগুলোও তারা যথাযথভাবে মানেননি। এ বিষয়ে রাজউকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। রাজউক নিয়ন্ত্রিত এলাকায় এ ধরনের আরও কত ভবনে অনুমোদনের শর্ত লঙ্ঘন করে ভবনের ব্যবহার হচ্ছে, তাও খতিয়ে দেখা দরকার।

জানা যায়, প্রতিবছর গড়ে রাজউক ৫ হাজার ভবন মালিককে ভবনের ত্রুটি সংশোধনে নোটিশ দিয়ে থাকে। সর্বশেষ গত বছর ১ হাজার ৮৯০টি ভবনের বিরুদ্ধে অভিযানও পরিচালনা করা হয়েছে। চলতি বছরও নকশার বিচ্যুতি করা ভবনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। প্রশ্ন হলো, নকশার বিচ্যুতি করা ভবনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও মানুষ কেন ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মাণ ও ভবনের বিপজ্জনক ব্যবহারে এতটা আগ্রহী। রাজউকের কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতির বিষয়টি বহুল আলোচিত। অভিযোগ রয়েছে, এ সংস্থায় অবৈধ আয়ের উৎস আছে জেনেই কেউ কেউ রাজউকের চাকরি বেছে নেন। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এদিকে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করি আমরা। তা না হলে ‘গ্রিনকজি কটেজ’ ভবনের ঘটনার মতো ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি হতে পারে। রাজধানীমুখী মানুষের স্রোত কমাতেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে রাজউকসহ অন্যান্য সংস্থার সফলভাবে দায়িত্ব পালনে নতুন নতুন সমস্যা সৃষ্টি হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম