মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি: বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি নয়, অপচয় রোধ করুন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে এবং নিচ্ছে। সর্বশেষ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদহার আরও বাড়ানো হয়েছে। এ দফায় সুদ সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ থেকে সর্বনিম্ন দশমিক ৬৪ শতাংশ বাড়বে। এতে সব ধরনের ঋণের সুদহার বেড়ে যাবে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে শিল্প খাতে। এদিকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণেও নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। যেমন-এলসি মার্জিন শিথিল, বিভিন্ন পণ্যের আমদানি শুল্ক কমানো, বাজারে তদারকি বাড়ানো ইত্যাদি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে কোনো পদক্ষেপই কাজে আসছে না। কমছে না মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য। এই যখন পরিস্থিতি, তখনই বাড়ানো হলো বিদ্যুতের দাম, যা গত ফেব্রুয়ারি থেকেই কার্যকর বলে জানানো হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের নানা চেষ্টার মাঝে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো কোন্ যুক্তিতে? কারণ জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ইত্যাদির দাম বৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব পড়ে মূল্যস্ফীতিতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুতের নতুন দামে ভয়ংকর রূপ নেবে মূল্যস্ফীতি। বেড়ে যাবে সবকিছুর উৎপাদন ব্যয়। বাজার পরিস্থিতি আরও নাগালের বাইরে চলে যাবে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসাবে সরকার বলছে, ডলারের কারণে ভর্তুকি বাড়ছে, গ্যাসের দামও ঊর্ধ্বমুখী, যে কারণে দাম সমন্বয়ে যেতে হচ্ছে। আমাদের কথা হলো, বিদ্যুৎ খাতে যে অপচয় ও দুর্নীতি হচ্ছে, তা বন্ধ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেন সরকার? উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ রয়েছে। এসব সংযোগ চিহ্নিত করে তা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হোক। দেশে বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। বেড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। এখন আর রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রেখে এগুলোর পেছনে মোটা অঙ্কের ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার কোনো কারণ নেই। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া হোক। আওয়ামী লীগের গত নির্বাচনি ইশতেহারেও এসব কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে। জনগণ এর বাস্তবায়ন দেখতে চায়।
আমরা মনে করি, জ্বালানি খাতের অপচয় ও অদক্ষতা রোধ করা হলে এ মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে না। এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতিতে কষ্টে আছে সাধারণ মানুষ। তার ওপর বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে জনগণের কষ্ট আরও বাড়ানো হচ্ছে, যা মেনে নেওয়া যায় না। সরকার জনগণের দুর্ভোগের বিষয়টি অনুধাবন করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, এটাই কাম্য।