ব্যর্থ বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজিং
গণপরিবহণে শৃঙ্খলা ফেরাতেই হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীর গণপরিবহণে শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রায় পাঁচ বছর আগে ‘বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজিং’ কার্যক্রম বাস্তবায়নের যে উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার, তা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এজন্য ভুল পথে কার্যক্রম পরিচালনাকে দায়ী করছেন।
তাদের মতে, ফ্র্যাঞ্চাইজিং পদ্ধতিতে কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেওয়া রুটে শুধু নির্ধারিত কোম্পানির বাস চলবে, অন্য কোনো বাস চলবে না। যাত্রীরা সুশৃঙ্খলভাবে টিকিট কেটে বাসে চলাচল করবেন। যেখানে-সেখানে যাত্রী ওঠানামা করা যাবে না। এতে করে সড়কে অসুস্থ প্রতিযোগিতা থাকবে না। অর্জিত মুনাফা কোম্পানিগুলোকে সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া হবে।
২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বরে প্রথমবারের মতো ৫০টি বাস দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। পরে আরও ১০০টি বাস নামানো হয়। কিন্তু ওই রুটগুলোতে ফ্র্যাঞ্চাইজিং কার্যক্রমবহির্ভূত বাস চলাচল অব্যাহত থাকায় কার্যক্রমের বেসরকারি বাসগুলোর চলাচল বন্ধ হয়ে যায় লোকসানের কারণে। ফলে ব্যর্থ হয় ‘বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজিং’ কার্যক্রম। তাই রাজধানীর গণপরিবহণে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা আর দূর হয়নি। বর্তমানে রাজধানীর গণপরিবহণ খাতে বিরাজ করছে চরম বিশৃঙ্খলা।
বস্তুত রাজধানীতে বাসের নামে যা চলছে তার সিংহভাগই মিনিবাস। এসব বাস রাস্তার মাঝখানে যত্রতত্র থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করায়। এতে সৃষ্টি হয় যানজট। আইনকানুন, নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কা এরা করে না। যাত্রীভাড়ার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
এসব বাসের বেশিরভাগেরই যথাযথ ফিটনেস নেই। রঙচটা, এবড়োখেবড়ো বডির এসব বাস নগরবাসীর জন্য দৃষ্টিকটুও বটে। জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর কালো ধোঁয়া নির্গত করে রাজধানীতে বায়ুদূষণ ঘটায় অনেক বাস।
অভিযোগ আছে, এসব বাসের অধিকাংশ চালকেরই প্রকৃত লাইসেন্স নেই। এসব কারণে বর্তমানে রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনাও বৃদ্ধি পেয়েছে। মহানগরীর সড়ক থেকে এসব বাস অপসারণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। সেক্ষেত্রে ভুল শুধরে নতুনভাবে ‘বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজিং’ কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে।
তবে গণপরিবহণে শৃঙ্খলা ফেরাতে যে উদ্যোগই নেওয়া হোক না কেন, তা হতে হবে যাত্রীবান্ধব। কারণ আমরা জানি, বাস মালিকরা প্রভাবশালী, তাদের অনেকেরই রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। গণপরিবহণে বিশৃঙ্খলা দূর না হওয়ার এটিই বড় কারণ বলে সাধারণ মানুষের ধারণা।
তাই আমরা মনে করি, রাজধানীর গণপরিবহণে শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্যোগ তখনই সফল হবে, যখন এর পেছনে কাজ করবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা। সরকার এ ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান নেবে, এটাই কাম্য।