সেচ বাণিজ্য
দোষীদের দ্রুত শাস্তি কাম্য
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অতীতে জমিদারি ব্যবস্থায় কৃষক শোষণ হতো। হাল আমলেও রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের গভীর নলকূপ অপারেটররা যেন জমিদারের উমেদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-অপারেটরদের অনৈতিক দাবির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের কয়েক লাখ কৃষক। জানা গেছে, চলতি আলু ও বোরো মৌসুমে বরেন্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের জিম্মি করে গভীর নলকূপ অপারেটররা সেচের জন্য নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ অর্থ আদায় করছে।
এ অনৈতিক দাবি কৃষক না মানলে তাদের জমিতে পানি দেওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে অপারেটররা। এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে ২০২২ সালের মার্চে সেচ না পেয়ে বরেন্দ্রের গোদাগাড়ী এলাকায় দুজন কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। বিষয়টি শুধু দুঃখজনক ও নিন্দনীয়ই নয়, উদ্বেগজনকও।
রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর জেলার এলাকা নিয়ে গঠিত খরাপ্রবণ এ বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষের মূল পেশা কৃষি। পানির অভাবে আশানুরূপ ফলন না পাওয়ায় আগে দরিদ্র অবস্থায় জীবনযাপন করত সেখানকার মানুষ। অবশ্য ১৯৯১ সালে কৃষি মন্ত্রণালয় বরেন্দ্র প্রকল্পের আওতায় গভীর নলকূপ স্থাপন শুরু করলে এ অঞ্চলের কৃষির চিত্র দ্রুত বদলে যেতে শুরু করে।
এখন বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটিতে বছরে তিন-চারটি ফসল উৎপন্ন হয়। তবে এ অঞ্চলের কৃষিব্যবস্থার পুরোটাই নিবিড় সেচনির্ভর হলেও অপারেটরদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে গভীর নলকূপের পানি কৃষকের কাছে সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। ১ ঘণ্টা সেচের জন্য যেখানে কৃষকের ১২৫ টাকা মূল্যের প্রি-পেইড কার্ড লাগে, সেখানে ঘণ্টাপ্রতি অপারেটরদের দিতে হয় ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা।
পানির প্রয়োজনীয়তাকে অনৈতিকভাবে কাজে লাগিয়ে মাঠপর্যায়ের এসব কর্মীর দুর্নীতি স্বভাবতই এ অঞ্চলের কৃষি উৎপাদনকে হুমকির মুখে ফেলছে। এ অনিয়ম কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এমন অভিযোগও আছে, প্রতিটি গভীর নলকূপে কমিশন ভিত্তিতে একজন অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হয়। এমনকি এ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন লোকজনও রাজনৈতিক বিবেচনায় কিংবা ঘুসের বিনিময়ে একাধিক নলকূপ অপারেটরের দায়িত্ব পান।
স্থানীয়দের দাবি, এ কারণেই নলকূপ অপারেটররা বেপরোয়া সেচ বাণিজ্য চালিয়ে যেতে সাহস পাচ্ছে। এ অবস্থায় বিষয়টি দ্রুত তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি আমরা। একইসঙ্গে কোনো অপারেটর অনৈতিকভাবে অর্থ দাবি করলে ভুক্তভোগীদেরও উচিত বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা। সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে কৃষকদের সেচ সমস্যার সমাধান করবে, এটাই প্রত্যাশা।