দূষিত শহরের শীর্ষে ঢাকা
পরিবেশ সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ কাম্য
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ বাতাসের শহরের তালিকায় প্রায় সবসময়েই শীর্ষে অবস্থান করছে ঢাকা। যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, শনিবারও বেলা ১১টা ২০ মিনিটে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) ঢাকার স্কোর ছিল ২৮০। অর্থাৎ, রাজধানীর বাতাসের মান ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’। আগের তিনদিনও ঢাকার বাতাসের মান ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় ছিল। এ তালিকায় ঢাকার পরের তিনটি শহর হচ্ছে ভারতের কলকাতা, পাকিস্তানের করাচি এবং ভারতের মুম্বাই। শহর তিনটি যথাক্রমে ২৭৪, ২৩৪ ও ২৩২ একিউআই স্কোর নিয়ে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান দখল করেছে। উল্লেখ্য, এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) ৩০১ বা এর বেশি স্কোরকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসাবে ধরা হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। বাংলাদেশে একিউআই নির্ধারণ করা হয় দূষণের পাঁচটি ধরনকে ভিত্তি করে-বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২ দশমিক ৫), এনও২, সিও, এসও২ ও ওজোন (ও৩)। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে দেখছি, দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণে ভুগছে ঢাকা। সারা বছর তো বটেই, শীতকালে সাধারণত এর বাতাসের গুণমান আরও অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায়।
পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, এ নগরীর বায়ুদূষণ যে বিপজ্জনক মাত্রায় রয়েছে, তা বিভিন্ন গবেষণায় একাধিকবার উঠে এসেছে। এরপরও তা নিরসনে কার্যত কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। চরম অস্বাস্থ্যকর বায়ুর মধ্যে শ্বাস নিয়েই জীবন কাটাচ্ছে মেগা সিটির মানুষ। ভুগছে অ্যাজমা, অ্যালার্জি, বমি, শ্বাসকষ্টসহ নানা ফুসফুসজনিত রোগে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত বায়ুদূষণবিষয়ক এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, বায়ুদূষণে এদেশে মানুষের গড় আয়ু কমে যাচ্ছে। কারণ ১৯৯৮ সালের তুলনায় বর্তমানে বায়ুদূষণ ৬৩ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য বলছে, বায়ুদূষণে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর আনুমানিক ৭ মিলিয়ন মানুষ প্রাণ হারান। মূলত স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী পালমোনারি রোগ, ফুসফুসের ক্যানসার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণে এ মৃত্যুহার বৃদ্ধি পায়। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ করে বায়ুর মান উন্নত করা হলে দেশের মানুষের গড় আয়ু বাড়বে বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল প্রতিবেদনে। আমরা যে গাইডলাইন মানছি না, একিউআই স্কোর তাই বলছে।
২০১৯ সালের মার্চে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়েছিল, ঢাকার বায়ুদূষণের তিনটি প্রধান উৎস হলো-ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলা। বস্তুত, এক সময় ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য দায়ী করা হতো ইটভাটার ধোঁয়াকে। পরে সে জায়গা দখল করে নেয় যানবাহন ও শিল্পকলকারখানার ধোঁয়া। গত কয়েক বছর ধরে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প ও ছোট-বড় আবাসন প্রকল্পের নির্মাণযজ্ঞ এ দূষণের মাত্রা আরও বাড়িয়েছে। আমরা মনে করি, দূষণ কমাতে রাজধানীতে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা দরকার। যদিও উন্নত গণপরিবহণব্যবস্থা গড়ে না উঠলে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমবে না। নগরীতে এখনো আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। এ কারণেও দূষণ বাড়ছে। এ ছাড়া অবকাঠামোগত সংস্কার ও নির্মাণের ক্ষেত্রেও বায়ুদূষণের বিষয়টি সরকারকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। রাজধানী তো বটেই, বস্তুত সারা দেশেই বায়ুদূষণ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীসহ সারা দেশের পরিবেশ সুরক্ষায় সরকার সমন্বিত পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।