ব্যাংক খাতে অনিয়ম: স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিতকরণ ও খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করার কথা বলা হয়েছে বুধবার ঘোষিত মুদ্রানীতিতে। এছাড়া মুদ্রানীতির বিবৃতিতে ঋণখেলাপিদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইন করতে সরকারের কাছে চিঠি দিতে বলা হয়েছে। কেউ ঋণখেলাপি থেকে মুক্ত হওয়ার পর কমপক্ষে ৫ বছর পর্যন্ত আর্থিক খাতের কোনো প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে যেন থাকতে না পারেন, এমন বিধান করার কথাও বলা হয়েছে। ব্যাংক খাতে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি, উচ্চ খেলাপি ঋণের বাস্তবতায় এসব প্রস্তাব যথার্থ বলে মনে করি আমরা। এক্ষেত্রে দ্রুত একটি রোডম্যাপ তৈরি করে তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
বস্তুত নতুন সরকারের কাছে ব্যাংক খাতে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধানের পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছেন অর্থনীতিবিদ, উদ্যোক্তা এবং দেশের আর্থিক খাতের শুভাকাঙ্ক্ষীসহ প্রত্যেকেই। ব্যাংক দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। সবাই জানেন, এ খাতে দীর্ঘদিন ধরে বিরাজ করছে নানা সমস্যা। দুর্নীতি-অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা তো আছেই, সেই সঙ্গে এ খাতের একটি বড় সমস্যা হলো উচ্চ খেলাপি ঋণ। মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলা যায়, খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলোর ভিত্তি দুর্বল করে দিচ্ছে। খেলাপি ঋণ শুধু ব্যাংক খাতে নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেই ঝুঁকি তৈরি করছে। মাত্রাতিরিক্ত খেলাপির প্রভাব পড়ছে ঋণ ব্যবস্থাপনায়। ফলে এগোতে পারছেন না ভালো উদ্যোক্তারা। পরিণামে বাড়ছে না বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান। কাজেই খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সংকট নিরসনের স্থায়ী পদক্ষেপ হিসাবে ব্যাংক খাতকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। এ খাতের সংস্কারে একটি কমিশন গঠনের দাবি দীর্ঘদিনের। ব্যাংক কোম্পানি আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার দাবিও রয়েছে। ব্যাংকগুলোর, বিশেষত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকাণ্ড সূক্ষ্মভাবে তদারক করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন। সরকারের বিগত মেয়াদে ব্যাংক খাত নানা সমস্যায় পড়েছে। আমাদের মনে আছে, বিগত সরকার গঠিত হওয়ার পরপরই অর্থমন্ত্রী খেলাপি ঋণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিলেন। তিনি সুস্পষ্টভাবে বলেছিলেন, ‘ব্যাংকের টাকা জনগণের টাকা, এ টাকা নিলে ফেরত দিতে হবে। দেশের জনগণের টাকা বেহাত হোক বা ফেরত না আসুক, এটি চাইতে পারি না। সরকারি বা বেসরকারি যে ব্যাংক থেকেই ঋণ নেওয়া হোক না কেন, ঋণের অর্থ ফেরত দিতে হবে।’ খেলাপি ঋণ আদায়ের বিষয়ে এ দৃঢ় অবস্থানের জন্য আমরা তাকে সাধুবাদ জানিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক, এ বক্তব্যের বাস্তবায়ন আমরা দেখিনি। তাই নতুন সরকার খেলাপি ঋণসহ ব্যাংক খাতে বিদ্যমান সব অনিয়ম নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা আশা করছি।
অনিয়ম রোধে ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এ খাতের নিয়োগ ও ব্যবস্থাপনাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে সততা ও দক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। কোথাও কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি ধরা পড়লে সব ধরনের রাজনৈতিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে থেকে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।