মন্দার কবলে শিল্প খাত
সংকট উত্তরণে নিতে হবে সময়োপযোগী পদক্ষেপ
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকট, বৈশ্বিক ও দেশীয় অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব, ডলার সংকটসহ বিভিন্ন কারণে শিল্প খাতের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বড় শিল্পের উদ্যোক্তারা শত প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন; তারা আগের ক্ষতি কাটিয়ে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
কিন্তু অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সামনে এগোতে পারছেন না। সার্বিকভাবে বড় শিল্পে উৎপাদন কিছুটা বাড়লেও অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে উৎপাদন কমে যাচ্ছে। গত অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরের তুলনায় সার্বিকভাবে চলতি অর্থবছরের একই সময়ে শিল্পে উৎপাদন বাড়লেও চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে কমছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যের আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ডলার সংকটে শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ডলারের দাম ও আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধি, দেশের বাজারে জ্বালানিসহ প্রায় সব ধরনের উপকরণের দাম বৃদ্ধিতে শিল্পে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন শিল্পপণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে বিনিয়োগ মন্দায় নতুন শিল্প স্থাপন হচ্ছে কম। এর প্রভাব পড়েছে কর্মসংস্থানে। একদিকে পণ্যের দাম বৃদ্ধি, অন্যদিকে মন্দা ও চড়া মূল্যস্ফীতি-এসব কারণে মানুষের আয় কমেছে। ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা হ্রাসের ফলে অত্যাবশ্যকীয় ও বিলাসী-সব পণ্যের বিক্রি কমেছে; কমেছে শিল্পে উৎপাদনও। বস্তুত মহামারির ধাক্কার পর শিল্প খাত কিছুটা গতিশীল হতে না হতেই ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক মন্দা দেখা দেয়। এতে দেশের শিল্প খাতে সংকট আরও বেড়ে যায়।
শিল্প খাতে অব্যাহত ডলার সংকটের নানামুখী প্রভাব পড়েছে। এদিকে ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় তারা এখন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অন্য পণ্য কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। কোনো কোনো কোম্পানির পণ্যের দাম কিছুটা কমলেও বিক্রি বাড়ছে না। জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে শিল্পে উৎপাদন কমেছে ২ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছিল সাড়ে ৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা দ্বিগুণ বেড়ে ১৫ দশমিক ২৯ শতাংশ হয়েছে। তবে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে উৎপাদন বৃদ্ধির হার কমছে।
এদিকে শিল্প খাতে চলছে কাঁচামালের সংকট। রপ্তানিকারকরা নিজ উদ্যোগে ডলার জোগাড় করে চাহিদা অনুযায়ী কাঁচামাল আমদানি করতে পারেন। কিন্তু বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের মধ্যে যাদের রপ্তানি আয় নেই, তারা ডলার জোগাড় করতে পারছেন না। ফলে আমদানির এলসিও খুলতে পারছেন না। ব্যাংকও চাহিদা অনুযায়ী ডলারের জোগান দিতে পারছে না।
সম্প্রতি প্রায় সব শিল্পের কাঁচামালের আমদানিই কমেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে বস্ত্র খাতের কাঁচামাল। অথচ মোট শিল্প উৎপাদনের প্রায় ৭২ শতাংশই আসে এ খাত থেকে। ফলে এ খাতের কাঁচামালের সরবরাহ কমায় সার্বিক শিল্প উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। একই সঙ্গে রপ্তানিও কমছে।
বস্তুত ঋণের সুদহার বৃদ্ধি; গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন সেবার দাম বৃদ্ধি-এসব কারণে শিল্প খাত কাবু হয়ে পড়েছে। মহামারির ক্ষতি কাটাতে সরকার যে ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিল; শিল্প খাত রক্ষায় এখন তেমন উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া দরকার। এ সংকট উত্তরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও উদ্যোগী হতে হবে।