ডেঙ্গুতে মৃত্যুর রেকর্ড: মশানিধন কার্যক্রম বছরব্যাপী অব্যাহত রাখতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিগত বছরগুলোয় এ সময়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা না গেলেও এবার ডিসেম্বরেও এ রোগে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা কমছে না। এ বছর দেশে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ১৭০০ ছাড়িয়েছে, যা রীতিমতো একটি রেকর্ড। শুধু এক বছরে নয়, আগের সব বছর মিলিয়েও ডেঙ্গুতে এত মৃত্যু দেখেনি বাংলাদেশ। পাশাপাশি এ বছর হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও ছিল অন্য বছরের তুলনায় তিনগুণ বেশি-৩ লাখ ২০ হাজার ৯৪৫। ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কখনো এত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়নি। এর কারণ হচ্ছে, মশাবাহিত এ ভাইরাস এবার ঢাকার বাইরেও ব্যাপক আকারে বিস্তার লাভ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবস্থা না নিলে নতুন বছর একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এতে মানুষের জীবনের ঝুঁকি ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর আঘাত আসতে পারে। দেশে ২০০০ সালে প্রথম বড় আকারে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেও তা ছিল মূলত ঢাকা শহরকেন্দ্রিক। ২০১৯ সালে অন্যান্য শহরের পাশাপাশি কয়েকটি গ্রামেও ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। যখন রাজধানীর বাইরে এর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল, তখনই যথাযথ পদক্ষেপ নিলে ডেঙ্গু পরিস্থিতির এতটা অবনতি হতো না। বলার অপেক্ষা রাখে না, আগামী দিনগুলোয় এটি মানুষের জীবনের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেবে। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যে ব্যবস্থাপনা দরকার ছিল, সেখানে বড় ঘাটতি রয়ে গেছে। এক্ষেত্রে বৃহত্তর পরিকল্পনার মাধ্যমে যদি সারা দেশে ডেঙ্গু নির্মূলে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া যায়, তাহলে বড় ধরনের ঝুঁকি থেকে পরিত্রাণ মিলতে পারে। বস্তুত একটি দেশে বা অঞ্চলে একবার ডেঙ্গু দেখা দিলে তা নির্মূল করা যায় না, বারবার ফিরে আসে। তবে মশক নিধনে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা যায়-বিশ্বে এমন বহু নজির রয়েছে। মশা নিয়ন্ত্রণে তাই বড় বড় শহরের মতো আমাদেরও উদ্যোগ নিতে হবে। শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও ডেঙ্গু নির্মূলে নিতে হবে উদ্যোগ।
মনে রাখতে হবে, শুধু রাসায়নিক কীটনাশক দিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এর বাহক এডিস মশার উৎপাতও বেড়েছে। এ প্রজাতির মশা প্রতিকূল জলবায়ুর সঙ্গে টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জন করেছে। যেহেতু এডিসের উৎপাত বছরজুড়েই থাকছে, তাই এ থেকে সুরক্ষা পেতে বছরব্যাপী মশক নিধন ও অন্যান্য কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। ডেঙ্গুর উৎস পুরোপুরি নির্মূলে সরকার সচেষ্ট হবে, এটাই প্রত্যাশা।