ভরা মৌসুমেও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি: বাজার ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজাতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাজারে আমনের নতুন চাল উঠেছে। এর আগে উঠেছে নতুন আলু, নতুন পেঁয়াজ। শীতের শাকসবজি উঠেছে বেশ কিছুদিন হলো। স্বভাবতই বাজারে এর প্রভাব পড়ার কথা। দাম কমার কথা। প্রতিবছর তা-ই ঘটে। কিন্তু এখন অর্থনীতির কোনো সাধারণ সূত্রই যেন কাজ করছে না বাজারে। পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও, এমনকি নতুন পণ্য উঠলেও সেসবের দামও ক্রমাগত বাড়ছে। চাল, মুরগি, আদা, রসুন, আলু, পেঁয়াজ-সবকিছুর দামই অসহনীয়। বস্তুত অসৎ ব্যবসায়ী এবং বাজার সিন্ডিকেটের কারণে এদেশের বাজারে এখন অর্থনীতির সব সূত্র অকার্যকর হয়ে পড়েছে। নানা পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হলেও বাজারে সিন্ডিকেট এখনো রয়েছে বহাল তবিয়তে। বস্তুত সিন্ডিকেট ভাঙতে ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ। সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে দেশের বাজারব্যবস্থা। বলা যায়, কোনো নিত্যপণ্যের ব্যবসাই এখন আর সিন্ডিকেটমুক্ত নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বাজারে সিন্ডিকেটের কারসাজি চলছে, অসৎ ব্যবসায়ীরা অসাধু পন্থা অবলম্বন করে অতি মুনাফা লুটছে-এসব কি দেখার কেউ নেই?
বস্তুত বাজারে এখন যা চলছে, তা স্বেচ্ছাচারিতার নামান্তর বলে মনে করি আমরা। ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে ইচ্ছামতো বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। ক্ষুব্ধ ক্রেতারা একে ‘বাজার সন্ত্রাস’ নামে অভিহিত করছেন। বাজারের এ পরিস্থিতি আর চলতে দেওয়া যায় না। যেভাবেই হোক, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সরকারকে। অসাধু ব্যবসায়ীদের শাস্তি দিতে হবে। অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেই দিনদিন তাদের লোভ বাড়ছে, তারা হয়ে উঠছে বেপরোয়া। মনে রাখতে হবে, এই অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা অপরাধী, তাদের শক্ত হাতে দমন করা জরুরি। এদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কার্যকর অভিযান শুরু করা দরকার।
ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেছেন, বাজারে তদারিক সংস্থাগুলো নামমাত্র অভিযান পরিচালনা করছে। এতে ক্রেতার কোনো লাভ হচ্ছে না। সামনে নতুন বছর। তাই এখন থেকেই বাজার ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজাতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের নামের তালিকা প্রকাশ করে অনিয়মের জন্য তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। এতে একটু হলেও ক্রেতাসাধারণের স্বস্তি ফিরবে। ক্যাব সভাপতির বক্তব্যের সঙ্গে একমত হয়ে আমরা বাজার তদারকি সংস্থার উদ্দেশে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, নিত্যপণ্যের প্রতিটি বাজারে নিয়মিত নজরদারির ব্যবস্থা করুন। প্রয়োজনে গোয়েন্দা তৎপরতা চালানো হোক। চিহ্নিত করা হোক সিন্ডিকেট। অসৎ ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের ব্যবস্থা করে আইনের আওতায় আনা হোক। এ ধরনের কিছু দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। পাশাপাশি ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (টিসিবি) সক্রিয় করুন। সময়মতো পণ্য আমদানি করুন। দেখবেন অতি মুনাফাখোরদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হয়ে গেছে। আর তা না পারলে সেটা বাজার তদারকি সংস্থা ও সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা বলে পরিগণিত হবে। প্রশ্ন উঠবে সংশ্লিষ্টদের সততা ও আন্তরিকতা নিয়ে। সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে হবে তাদের বিরুদ্ধেও।