আয়বৈষম্য বৃদ্ধি
প্রয়োজন জনকল্যাণমুখী উন্নয়ন কর্মসূচি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয়-ব্যয় জরিপ ২০২২-এর চূড়ান্ত ফলাফল অনুযায়ী, দেশে দারিদ্র্যের হার কমলেও বেড়েছে আয়বৈষম্য। এক্ষেত্রে গিনি সহগের মান শূন্য দশমিক ৪৯৯, যা ২০১৬ সালে ছিল শূন্য দশমিক ৪৮২। পাশাপাশি বেড়েছে ভোগবৈষম্যও। এছাড়া জরিপে প্রকাশ পেয়েছে, দেশের সর্বোচ্চ ধনী ৫ শতাংশ মানুষের আয় মোট আয়ের ৩০ দশমিক ০৪ শতাংশ। অন্যদিকে সর্বনিম্নে থাকা ৫ শতাংশ দরিদ্র মানুষের আয় মোট আয়ের শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ। এ থেকেই ধারণা মেলে বৈষম্যটা কত বেশি। ধনীদের আয় বাড়ছে উচ্চহারে আর দরিদ্রদের নিুহারে। জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, সার্বিক দারিদ্র্যের হার কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৭৬ শতাংশে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, গড় দারিদ্র্যহার কমলেও আয়বৈষম্য বৃদ্ধি মানে এক অর্থে দারিদ্র্য আরও বেড়ে যাওয়া। বস্তুত বৈষম্য বৃদ্ধির কারণেই দারিদ্র্য বৃদ্ধি পায়। বিবিএসের খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে বলা যায়, দেশ সার্বিকভাবে উন্নত হলেও, প্রবৃদ্ধি বাড়লেও এর সুফল সবাই ভোগ করছে না। অথচ সবার মধ্যে প্রবৃদ্ধির সুফল সমানভাবে বণ্টিত হলেই উন্নয়ন টেকসই হয়।
আয় ও সম্পদের বণ্টন অসম হওয়ার বা বৈষম্য বৃদ্ধির পেছনে বেশকিছু কারণ থাকে। প্রথমত, রাজস্বনীতি দরিদ্রবান্ধব না হওয়া। রাজস্বনীতি দরিদ্রবান্ধব না হলে বৈষম্য বাড়ে। দ্বিতীয়ত, বৈষম্য ও দারিদ্র্য বৃদ্ধির একটি বড় কারণ দুর্নীতি। প্রশাসন ব্যাপকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত হলে দরিদ্রদের কল্যাণে যত অর্থই ব্যয় করা হোক, তাদের কাছে পৌঁছায় এর সামান্যই। তাই সবকিছুর আগে টেনে ধরতে হবে দুর্নীতির লাগাম। কারণ, যে পদক্ষেপই নেওয়া হোক না কেন, তার উদ্দেশ্য নস্যাৎ হয়ে যায় মূলত দুর্নীতির কারণে। কাজেই বৈষম্য কমাতে হলে দুর্নীতি দমন ও সুশাসনের ওপর জোর দিতেই হবে।
আয়বণ্টনে বৈষম্য কম হলে তা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের শিক্ষায় প্রবেশগম্যতা এবং ঝরে পড়া রোধে বড় ভূমিকা রাখে। আর শিক্ষা হলো একটি দেশে সামাজিক গতিশীলতা এবং জীবনমান উন্নয়নের খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কারণ শ্রমের উচ্চ উৎপাদনশীলতা মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির পূর্বশর্ত। বিপুলসংখ্যক নিরক্ষর ও অশিক্ষিত মানুষ নিয়ে কোনো দেশ উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছেছে, ইতিহাসে এমন দৃষ্টান্ত একটিও খুঁজে পাওয়া যায় না। স্বল্প শিক্ষার কারণে অথবা শিক্ষার সুযোগ থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত থাকার ফলে দরিদ্রদের উপার্জন সক্ষমতাও কম। কাজেই জনগণের মৌলিক শিক্ষাটা নিশ্চিত করতে হবে।
দেশে যে খাতগুলোর মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি ঘটছে, তার অধিকাংশ মূলত ধনী বা সম্পদশালী ব্যক্তিদের অধিকারে। দরিদ্রদের নিজস্ব সম্পদের পরিমাণ সামান্য। তাই প্রবৃদ্ধির সুফলও তারা সামান্যই পাচ্ছে। উন্নতি ও প্রবৃদ্ধির সুফলপ্রাপ্তিতে বৈষম্য থাকায় দেশের জনসংখ্যার ছোট একটা অংশ আরও ধনী হচ্ছে এবং ব্যাপক অংশ তাদের ন্যায্য অংশীদারত্ব থেকে বঞ্চিত থাকছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের সাধারণ মানুষের প্রাপ্য ন্যায্য অধিকার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে, যা তাদের সাংবিধানিক অধিকার। এ লক্ষ্যে উন্নয়ন ভাবনা ও কর্মসূচি প্রণয়নে সরকার জনকল্যাণকে প্রাধান্য দেবে, এটাই প্রত্যাশা।