বড়দিনের শুভেচ্ছা
সম্প্রীতির জয় হোক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আজ শুভ বড়দিন। আজ থেকে দুই সহস্রাধিক বছর আগে জেরুজালেমের কাছাকাছি বেথলেহেম নগরীর এক গোয়ালঘরে জন্মেছিলেন খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট। ৩৩ বছরের স্বল্পস্থায়ী জীবনে তিনি মানুষকে শুনিয়েছেন শান্তির বাণী, ভালোবাসার কথা। হিংসা-দ্বেষ, পাপ-পংকিলতা থেকে মানুষকে মুক্ত করাও ছিল তার প্রবর্তিত ধর্মের অন্যতম মূল কথা। তার শান্তির বাণী জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবার জন্য প্রযোজ্য। মতবাদ প্রচারের সময় অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন যিশু। কিন্তু কোনো নির্যাতন-নিপীড়নই তাকে সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। মানুষকে জয় করার হাতিয়ার ছিল তার সংযম ও সহিষ্ণুতা।
বর্তমান যুদ্ধ-বিগ্রহ ও সংঘাতময় পৃথিবীতে যিশুর বাণী কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। যিশু বিশ্বাস করতেন ঈশ্বরের শক্তিতে। বাইবেলে বর্ণিত আছে-‘আমি সব মন্দ আত্মাকে তাড়াই ঈশ্বরের শক্তিতে এবং তোমরা যা আমার কাছ থেকে শোনো, তা আমার নয় বরং সেসব কথা পিতার, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন।’ বর্তমান বিশ্বের হিংসা-বিদ্বেষ প্রকৃত অর্থে আত্মারই সংকট। মন্দ আত্মা মানুষকে তাড়িয়ে ফিরছে নেতিবাচকতার দিকে। মানুষের মধ্যে যিশু প্রস্তাবিত পরিশুদ্ধ আত্মার প্রতিস্থাপনে এ সংকট থেকে মুক্তি মিলতে পারে। যিশু সব মানুষের জন্য সমান সুযোগের কথাও শুনিয়েছেন। আধুনিক গণতন্ত্রের মর্মকথাও তা-ই। সভ্যতার ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, শুধু খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের জীবন ও দর্শনেই যিশুর প্রভাব পড়েনি, পুরো মানবসভ্যতাই কিছু না কিছু মাত্রায় প্রভাবিত হয়েছে তার আদর্শ, নীতি ও বিশ্বাস দ্বারা।
প্রতিবছর এই দিনে বিশ্বের খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে বাংলাদেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ও আনন্দঘন পরিবেশে বড়দিনের উৎসব পালন করে থাকে। দিনটি উপলক্ষে যিশুখ্রিষ্টের জন্মের কাহিনি পাঠ ও ধ্যান করা হয়। সেই কাহিনি অবলম্বনে গির্জাঘরে এবং বাড়িতে বাড়িতে গোশালা নির্মাণ করে ফুলপাতা দিয়ে সাজানো হয়। এর সঙ্গে গান-বাজনা, নাম-সংকীর্তন, ভোজন, আনন্দ-উল্লাস ইত্যাদি চলে। এসব বাহ্যিক উৎসব-আয়োজনের ঊর্ধ্বে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা তাদের হৃদয়-মন ও অন্তরাত্মাকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করতে প্রয়াসী হন। তাদের এই আনন্দ-উৎসব যাতে নিছক আচারিক বা অনুষ্ঠানসর্বস্ব না হয়, সেজন্য বড়দিনের পূর্ববর্তী চার সপ্তাহব্যাপী আগমনকাল হিসাবে পালনের ব্যবস্থা করেন। এ সময়ে খ্রিষ্টভক্তরা ধ্যান-অনুধ্যান, মন পরীক্ষা, ব্যক্তিগত পাপ স্বীকার, সমবেত পুনর্মিলন বা ক্ষমা-অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষে মানুষে সম্পর্কের উন্নয়ন ও নবায়ন করতে সচেষ্ট হন।
বড়দিনের উৎসবে মুসলমান সম্প্রদায়ও যোগ দিয়ে থাকে এবং আনন্দ ভাগ করে নেয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ এক অনন্য দৃষ্টান্ত আমাদের দেশে। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী অংশ নিয়েছিলেন, তাদের অনেকে শহিদও হয়েছেন। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরাও একাকার হয়ে আছেন এদেশের মুসলমান সম্প্রদায়ের সঙ্গে। বড়দিন উপলক্ষে আমরা বাংলাদেশে অবস্থানরত খ্রিষ্টানসহ পৃথিবীর সব খ্রিষ্টান সম্প্রদায়কে জানাই শুভেচ্ছা। বড়দিনের উৎসব সর্বজনীনতা লাভ করুক। এ ধর্মীয় উৎসবের মধ্য দিয়ে সব ধর্মের মানুষের মধ্যে সংহতি গড়ে উঠবে এবং তা বিশ্বভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।