শহরতলি ট্রেন চালুর পরিকল্পনা
দ্রুত বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানী এবং এর আশপাশ জেলার সঙ্গে লোকাল বা কমিউটার ট্রেন চালুর পরিকল্পনা প্রায় এক যুগ আগের। এ সময়ের মধ্যে বহু আন্তঃনগর ট্রেন চালু হলেও সাধারণ মানুষের চলাচলের ট্রেন চালু করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি। সাধারণ মানুষের জোরালো দাবি-সব রুটেই পর্যাপ্ত কমিউটার ও শহরতলি ট্রেন চালু করা হোক। জানা যায়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-টঙ্গী, ঢাকা-জয়দেবপুর, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-নরসিংদী রুটে অন্তত ১২ জোড়া সাধারণ ট্রেন চালানো সম্ভব। বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও বিভিন্ন কারণে তা সফল হয়নি। বস্তুত অধিক যাত্রী পরিবহণ ও সেবা বাড়াতে হলে লোকাল, মেইল, কমিউটার কিংবা শহরতলি ট্রেন চালুর বিকল্প নেই। রাজধানীর সঙ্গে আশপাশের জেলায় অধিকসংখ্যক সাধারণ ট্রেন চালানো গেলে বিপুলসংখ্যক যাত্রী পরিবহণের সঙ্গে রেলের আয়ও বাড়বে। আশপাশের বিভিন্ন গন্তব্য থেকে সাধারণ মানুষ খুব সহজে ঢাকায় এসে কাজ শেষে বাড়ি ফিরতে পারলে রাজধানীর ওপর মানুষের চাপও কমবে। অনেক দেশেই এমন ব্যবস্থা রয়েছে। রেলের বিভিন্ন রুটে পুরোনো কোচ বদলে নতুন কোচ লাগানো হচ্ছে। এসব কোচ দিয়ে সাধারণ ট্রেন চালু করা সম্ভব। জানা যায়, ইঞ্জিন, চালক ও লোকবলের অভাবে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন হয়ে প্রতিদিন ১০৮টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে। ঢাকা থেকে বিমানবন্দর-জয়দেবপুর পর্যন্ত চলমান তৃতীয় ও চতুর্থ লেনের কাজ সম্পন্ন হলে এ পথে প্রতিদিন প্রায় আড়াইশ ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব হবে। কাজেই এ দুটি লেনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা দরকার। বর্তমানে ঝুঁকি নিয়ে অনেক যাত্রী ট্রেনে চলাচল করছেন। অনেকে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদেও ভ্রমণ করছেন।
বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া রাজধানীর জনজীবন ক্রমেই কঠিন থেকে কঠিনতর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে থাকবে। বিকেন্দ্রীকরণের পাশাপাশি ঢাকার জনঘনত্ব কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। দেশের টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে রাজধানীকে বাসযোগ্য করে গড়ে তোলা জরুরি। অস্বাভাবিক জনঘনত্বের কারণে ঢাকার জনজীবনে এখনই বহু সমস্যা জটিল আকার ধারণ করেছে। উদ্বেগজনক তথ্য হলো, এ নগরীতে প্রতিদিন আরও বহু মানুষ যোগ হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গী, জয়দেবপুর, নরসিংদী, সাভার, মুন্সীগঞ্জ এসব জায়গা থেকে মানুষ যাতে দ্রুত ট্রেনে রাজধানীতে এসে দিনের কর্ম সম্পাদন করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতে পারে সেজন্য পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এ জন্য রেলের সম্প্রসারণের জন্যও পদক্ষেপ নিতে হবে। লোকাল, কমিউটার ও শহরতলি ট্রেন চালু হলে সড়কপথেও চাপ কমবে।
রেল সাধারণ মানুষের বাহন, এটা কর্তৃপক্ষকে খেয়াল রাখতে হবে এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। রেলকে সত্যিকার অর্থে যাত্রীবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতিষ্ঠানটির দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দূর করাও জরুরি। পর্যাপ্ত কমিউটার ও শহরতলি ট্রেন চালুর পাশাপাশি মানুষ যাতে ট্রেনে বিনা টিকিটে ভ্রমণ না করেন, তাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বিনা টিকিটে ভ্রমণকারীদের কারণে প্রতিবছর রেল কর্তৃপক্ষ বিপুল অঙ্কের অর্থ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনের দূরত্ব প্রায় ১৩ কিলোমিটার। কেবল এ রুটেই বিনা টিকিটে ভ্রমণকারীদের কারণে রেল কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন প্রায় ৩১ লাখ টাকার আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। রেলের লোকসান ক্রমান্বয়ে কমিয়ে একে লাভজনক করার চেষ্টা করতে হবে।