বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার
ছোট আমানতকারীদের স্বার্থও রক্ষা করতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছোট আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছিল। অব্যাহত মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে ২০২১ সালের ৮ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি সার্কুলার জারি করে। এতে বলা হয়, ৩ মাস ও এর বেশি মেয়াদি ব্যক্তি পর্যায়ের আমানত এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, অবসর-পরবর্তী পাওনাসহ বিবিধ পাওনা পরিশোধের লক্ষ্যে গঠিত তহবিলে জমাকৃত যে কোনো পরিমাণ আমানতের ওপর সুদ বা মুনাফার গড় মূল্যস্ফীতির হারের কম হবে না। এদিকে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ সার্কুলারের মধ্য দিয়ে মূল্যস্ফীতির ছোবল থেকে ছোট আমানতকারীদের রক্ষা করার বিধানটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে এখন থেকে ব্যক্তি ও সরকারি বেসরকারি খাতের কর্মীদের যৌথ হিসাবে জমা আমানতের বিপরীতে সুদহার নির্ধারিত হবে বাজার ভিত্তিতে। এর আগে ছোট আমানতকারীরা গড় মূল্যস্ফীতির চেয়ে বেশি সুদ পেতেন। এখন বাজারভিত্তিক সুদহারের কারণে মূল্যস্ফীতির চেয়ে বেশি সুদ পাবেন না। নতুন সার্কুলার জারি করে আগের সার্কুলারটি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় এখন থেকে ব্যাংকগুলো নিজস্ব বিবেচনায় সুদ নির্ধারণ করবে। উল্লেখ্য, ১ জুলাই থেকে আইএমএফ-এর শর্তে ঋণের সুদহারকে বাজারভিত্তিক করা হয়।
ব্যাংক আমানতের ওপর আমানতকারী যে সুদ প্রদান করে, তার ওপর কর আরোপ করা হয়। আমানতে কম সুদহার, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কর এ ধরনের সব অভিঘাত আসে আমানতকারীদের ওপর। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর উচিত এসব খাতেও ছোট আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়া। বস্তুত ছোট আমানতকারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিরুপায়। বিনিয়োগ জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে আমানতের সুদহার কম হলেও তারা বাধ্য হয়ে ব্যাংকেই টাকা রাখবেন। কর্তৃপক্ষের উচিত ছোট আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষার পাশাপাশি শারীরিক প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, বিধবা, পেনশনভোগী-এ ধরনের অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর জনগোষ্ঠীর স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া। তা না হলে এসব জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি তাদের ওপর নির্ভরশীলরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। মূল্যস্ফীতির চেয়ে ব্যাংকের আমানতের সুদ কম হলে মানুষ বিনিয়োগের বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজবে, এটাই স্বাভাবিক। আমানতের সুদহার কমতে থাকলে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ বেশি হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। কাজেই মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় আমানতের সুদ যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা দরকার।