বিনা টিকিটে ভ্রমণ গ্রহণযোগ্য নয়
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ট্রেনে বিনা টিকিটে ভ্রমণ কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না। বিষয়টি উদ্বেগজনক। বিনা টিকিটে ভ্রমণকারীদের কারণে প্রতিবছর রেল কর্তৃপক্ষ বিপুল অঙ্কের অর্থ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জানা যায়, ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনের দূরত্ব প্রায় ১৩ কিলোমিটার। এ পথে প্রতিদিন ১০৮টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে। একেকটি ট্রেনে গড়ে ৬০০ যাত্রী বিনা টিকিটে ভ্রমণ (আসা-যাওয়া) করেন। প্রতিদিন ১০৮টি ট্রেনে অন্তত ৩২ হাজার ৪০০ (যাওয়া-আসা মিলে অন্তত ৬৪ হাজার) যাত্রী বিনা টিকিটে ভ্রমণ করেন। এ রুটে আন্তঃনগর ট্রেনের ভাড়া ৫০ টাকা এবং মেইল ট্রেনের ৪৫ টাকা। এসব যাত্রীপ্রতি গড়ে ৪৭ টাকা ৫০ পয়সা ভাড়া আদায় হলে প্রতিদিন ৩১ লাখ টাকা আয় হতো রেলের। কিন্তু এ রুটে টিকিট চেকিং না হওয়ায় যুগের পর যুগ বিনা টিকিটে যাত্রী পরিবহণ করে রাজস্ব হারাচ্ছে রেলওয়ে।
জানা যায়, প্রতিদিন ট্রেনগুলো কমলাপুর থেকে ছাড়ার পর অর্ধেকেরও বেশি যাত্রী উঠে বিমানবন্দর স্টেশন থেকে। গড়ে একটি ট্রেনে ৭৫০ যাত্রী চলাচল করেন। অর্ধেক যাত্রী বিমানবন্দর থেকে উঠলে কমলাপুর থেকে ৩৭৫ যাত্রী নিয়ে ট্রেন ছাড়ে। বাস্তবে একেকটি ট্রেন দ্বিগুণেরও বেশি যাত্রী নিয়ে চলছে। অনুরূপভাবে কমলাপুরে প্রবেশের আগে সবকটি ট্রেন বিমানবন্দর স্টেশনে বিরতি দেয়। ওই সময় অর্ধেকের বেশি যাত্রী বিমানবন্দর স্টেশনে নেমে পড়েন। একরকম ফাঁকা ট্রেনে শত শত বিনা টিকিটের যাত্রী উঠে কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছে বিনা বাধায় বেরিয়ে পড়েন। কমলাপুর স্টেশন সূত্রে জানা যায়, ট্রেন পৌঁছার পর স্টেশন থেকে যাত্রীরা হুড়হুড় করে বেরিয়ে পড়েন। বহির্গেটে নামমাত্র কয়েকজন টিটিই দাঁড়িয়ে থাকেন। জনবল সংকটের কারণে ২ শতাংশ যাত্রীর টিকিটও চেক করা সম্ভব হয় না। কমলাপুর-বিমানবন্দর স্টেশন পর্যন্ত কিছুসংখ্যক যাত্রী রোজ এবং মাসিক টিকিট কেটে চলাচল করেন। অধিকাংশ যাত্রীই বিনা টিকিটের।
রেল সাধারণ মানুষের বাহন, এটা কর্তৃপক্ষকে খেয়াল রাখতে হবে এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানটির লোকসান ক্রমান্বয়ে কমিয়ে একে লাভজনক করার চেষ্টা করতে হবে। সেই সঙ্গে রেলকে সত্যিকার অর্থে যাত্রীবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতিষ্ঠানটির দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দূর করাও জরুরি।