ভেষজ চিকিৎসার নামে প্রতারণা
ভার্চুয়াল দুনিয়ায় কঠোর নজরদারি প্রয়োজন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার নামে প্রতারণার হাট বসিয়েছে একদল প্রতারক। সুস্থতার আশায় সেসব ফাঁদে পাও দিচ্ছেন অনেকে। বুধবার যুগান্তরে প্রকাশ-ভেষজ, হার্বাল, আয়ুর্বেদিক, ইউনানি, অর্গানিকসহ নানা নামে ফেসবুকে দেদার বিক্রি হচ্ছে মানহীন ও ক্ষতিকর ওষুধ, ফুড সাপ্লিমেন্ট ও কসমেটিকস-যেগুলো তৈরিতে নেই কোনো অনুমোদন। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না চিকিৎসাবিজ্ঞানের কোনো নিয়মকানুন। ‘শতভাগ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ও বিফলে মূল্য ফেরত’ ঘোষণা দিয়ে ফেসবুকে রীতিমতো আধিপত্য বিস্তার করেছে এসব ভুয়া পণ্য। চটকদার এসব বিজ্ঞাপনে বিভ্রান্ত হয়ে নকল ও ভেজাল পণ্য সেবন করে শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন অনেকে।
বর্তমানে ফেসবুকে এ ধরনের অনুমোদনহীন সহস্রাধিক পেজ আছে। জন্ডিসের ওষুধ থেকে শুরু করে ডায়াবেটিস, লিভার, হাড়ক্ষয়, দৃষ্টিশক্তি, জ্বর, কাশি, কোষ্ঠকাঠিন্য, পাইলস, কোলেস্টেরল, ওজন কমানো, উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ-কী নেই এসব পেজে! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধ প্রস্তুতকারক ও গবেষকদের চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ে বৈধ সনদ থাকতে হয়। কোনো ওষুধ, ফুড সাপ্লিমেন্ট ও কসমেটিক পণ্য বাজারজাতের আগে মানবদেহে তা কতটুকু মাত্রায় কার্যকর এবং এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে কি না, তা নিয়ে গবেষণা করা হয়। মানবদেহে প্রয়োগের আগে প্রাণীদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও হয়। চূড়ান্ত ধাপে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদনের পর তা বাজারজাত করা হয়।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্র বলছে, অ্যালোপ্যাথিক, ইউনানি, আয়ুর্বেদিক, হোমিও ও হারবাল ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের চাহিদার ৯৮ শতাংশের জোগান দিয়ে বিশ্বের ১৫৭টি দেশে রপ্তানি করছে। বর্তমানে ওষুধের এ বাজার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার। সুযোগসন্ধানী প্রতারকরা রোগীদের আকৃষ্ট করতে প্রচারপত্র বিলি, কেবল অপারেটরে বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় ফেসবুকে পেজ ও গ্রুপ খুলে বিভিন্ন নামে এসব মানহীন ও নকল ওষুধ বিক্রি করছে। যদিও আইনে আছে, শুধু হারবাল বা ভেষজই নয়, প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিও ফেসবুকে ক্যাম্পেইন করে ওষুধ বিক্রি করতে পারে না। ফেসবুকে এসব পেজ কারা পরিচালনা করছে, জনস্বার্থে দ্রুত এর তদন্ত হওয়া দরকার। অনলাইনে অপরাধ ঠেকাতে সরকার যে কঠোর সাইবার নিরাপত্তা আইন করেছে, তা মূলত এসব অপরাধের লাগাম টেনে ধরতেই কাজ করার কথা। অনলাইনে এমন প্রতারণা ঠেকাতে স্বাস্থ্যসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।