Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

চ্যালেঞ্জের মুখে পোশাকশিল্প, দেশের প্রধান রপ্তানি খাতকে বাঁচাতে হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চ্যালেঞ্জের মুখে পোশাকশিল্প, দেশের প্রধান রপ্তানি খাতকে বাঁচাতে হবে

দেশের তৈরি পোশাকশিল্প বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে শনিবার যুগান্তরে প্রকাশ-সাম্প্রতিক সময়ে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈশ্বিক ভূরাজনীতিতে বিদ্যমান দ্বন্দ্ব, বিভিন্ন জ্বালানি উপকরণের দাম বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে তুলার দামে ব্যাপক ওঠানামা-এসব কারণে এ খাতে চ্যালেঞ্জ বাড়ছে।

এছাড়া করোনা মহামারির কারণে বিদেশি ক্রেতাদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ভিয়েতনামের মুক্তবাণিজ্য চুক্তিও দেশের পোশাকশিল্পে চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা দিয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জের কারণে দেশের পোশাক রপ্তানির ধারাবাহিকতা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এলডিসি বা স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি পর্যায়ে আরও কিছু চ্যালেঞ্জ আসছে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় থাকার কারণে কিছু দেশে পোশাক রপ্তানিতে শুল্ক ও কোটা সুবিধা পাওয়া যায়। এ তালিকা থেকে বের হলে ওইসব সুবিধা আর মিলবে না। তখন উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা করে পোশাক রপ্তানি করতে হবে। ফলে বাংলাদেশকে আরও কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে।

এটা ঠিক, রপ্তানির প্রবৃদ্ধি নির্ভর করে বৈশ্বিক পরিস্থিতির ওপর। সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বড় চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। এর জেরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ঋণের উচ্চ সুদহার, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা, ভূরাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা, উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে দুর্বলতা এবং জটিল আর্থিক পরিবেশ রপ্তানি খাতের প্রাপ্তি ও প্রত্যাশাগুলোকে আগামী দিনে আরও সংকুচিত করে দিতে পারে। একই সঙ্গে দেশে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব এ খাতে পড়েছে। ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি পোশাকশিল্পের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বিকেএমইএ-এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এ প্রসঙ্গে বলেছেন, বৈশ্বিক মন্দা ও দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ইতোমধ্যে এ খাত ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ ব্যবসা হারিয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে পরিস্থিতি সামনে আরও খারাপ হতে পারে। এ বাস্তবতায় মধ্যম থেকে দীর্ঘ মেয়াদে এসব সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। বাণিজ্য খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কারে আন্তরিক হতে হবে। যেমন, কিছু খাতে রপ্তানি ভর্তুকি প্রত্যাহার করা যেতে পারে। পাশাপাশি বিনিয়োগ নীতিতে সমন্বয়, মেধাসম্পদে অধিকার প্রতিষ্ঠার নীতি প্রণয়ন করতে হবে। প্রতিবছর পোশাকশিল্পে মূল্য সংযোজনের হার বৃদ্ধি বন্ধসহ সরকারকে নানা পদক্ষেপ নিতে হবে।

পাশাপাশি এটাও মনে রাখা প্রয়োজন, দেশের মোট পোশাক রপ্তানির ৮২ শতাংশ যায় ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোয়। এসব দেশে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হলে এ শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ কমে যাবে। এ অবস্থায় পোশাক তৈরিতে বৈচিত্র্য আনা, রপ্তানি আদেশ দেওয়ার পর দ্রুত সময়ে পণ্য জাহাজীকরণ, দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দ্রুত উৎপাদন ও খরচ কমানো, কার্যকর গবেষণা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা, রপ্তানি বাড়াতে নতুন বিশ্ববাজার খুঁজে বের করা এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ায় আধুনিকীকরণসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, তা পোশাকশিল্প মালিক ও সরকারকে আমলে নিতে হবে। দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম