ড্রেজার নির্মাণে দুর্নীতি
জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কারিগরি সহযোগিতা ছাড়াই কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড ব্যয়বহুল ৭টি ড্রেজার নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডে (পাউবো) সরবরাহ করেছে বলে জানা গেছে। অথচ ক্রয় প্রক্রিয়ায় প্রধান শর্তই ছিল অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের কারিগরি সহায়তা গ্রহণ। এ সহায়তা ছাড়া নির্মাণ করায় এগুলোর নদী ড্রেজিংয়ে প্রকৃত উৎপাদনক্ষমতা অনেক কম। মঙ্গলবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, ৭ ড্রেজারের ৬১৫ কোটি টাকার চুক্তিমূল্যের এ তথ্য বছরের পর বছর গোপন ছিল। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একটি অভিযোগ দেওয়ার পর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে এ সংক্রান্ত ভয়াবহ চিত্র উঠে আসে। এতে উঠে এসেছে, ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনটি উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে পাউবো কর্ণফুলী শিপইয়ার্ড লি. তথা ভোস্তা এলএমজি কর্ণফুলী জয়েন্ট ভেঞ্চার কনসোর্টিয়াম লি. কর্তৃক ৭টি ড্রেজার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির সরবরাহ নেয়। এর মধ্যে একটি দরপত্রে ২৩৯ কোটি ৫৭ লাখ ৭৪ হাজার ৭১৯ টাকা চুক্তিমূল্যে দুইটি ড্রেজার, অন্য একটি দরপত্রে ২৫৭ কোটি ৪৪ লাখ ২৭ হাজার ৯৬৪ টাকা চুক্তিমূল্যে তিনটি ড্রেজার এবং আরেকটি দরপত্রে ১১৮ কোটি ৭ লাখ ৯২৪ টাকা চুক্তিমূল্যে দুইটি ২০ ইঞ্চি ড্রেজারসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে পিপিআর ২০০৮-এ বিধিমালা (বিধি-১২)-এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে টেন্ডার ডকুমেন্টে গুডসের পরিবর্তে ওয়ার্কসের নথিপত্র ব্যবহার করা হয়।
জানা যায়, সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের ৮ প্রকল্প পরিচালক (পিডি) এসব ড্রেজার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির মান সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়েই বিল পরিশোধ করেন। এ সময় ড্রেজার সরবরাহের কাজ বাগিয়ে নিতে শুধু দরপত্রের নথিপত্র নয়ছয়ই হয়নি, ভোস্তা এলএমজি নেদারল্যান্ডসের টেকনিক্যাল সাপোর্ট ছাড়াই শুধু কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সকে ড্রেজার তৈরির সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া হয়। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগেই এ প্রকল্পের দায়িত্বরত ওই ৮ পিডি অবসরে চলে যান। পাউবো বিভাগীয় মামলা করে কৈফিয়ত তলব করলেও তারা সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি। আবার চাকরি থেকে অবসরের সুযোগ নিয়ে দুজন পিডি নাকি তদন্ত কমিটিকে কোনো সহযোগিতাই করেননি।
সরকারের জনকল্যাণমূলক কাজগুলোয় এমন দুর্নীতির কারণে জনগণের অর্থের শ্রাদ্ধ তো ঘটছেই, সেই সঙ্গে প্রাণ-প্রকৃতি হুমকিতে পড়ার পাশাপাশি দুর্ভোগে পড়ছেন দেশের সাধারণ মানুষ। বিপাকে পড়া মানুষ সরকারকে দোষারোপ করলেও দুর্নীতিবাজরা কিন্তু অধরাই থেকে যায়। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারীদের তাই যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা জরুরি। দুর্নীতির প্রমাণসাপেক্ষে ন্যায্য শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে একদিকে যেমন কূটকৌশলীরা দুর্নীতির সাহস হারাবে, তেমনই জনগণের কাছে সরকারের ভাবমূর্তিও অক্ষুণ্ন থাকবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ কর্ণফুলীর ৭ ড্রেজার নির্মাণের দুর্নীতির বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।