আবারও ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস: নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের বিকল্প নেই
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আবারও ঘটেছে বাংলাদেশের মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হওয়ার ঘটনা। জানা গেছে, বাংলাদেশি সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) থেকে এসব তথ্য বেহাত হয়ে যায়। ফাঁস হওয়া তথ্যের মধ্যে রয়েছে নাগরিকের নাম, পেশা, রক্তের গ্রুপ, মা-বাবার নাম, ফোন নম্বর, বিভিন্ন ফোন কলে তিনি কত সময় কথা বলেছেন, গাড়ির নিবন্ধন নম্বর, পাসপোর্টের বিস্তারিত তথ্য ও আঙুলের ছাপের ছবি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তিবিষয়ক সংবাদ সাময়িকী ‘ওয়্যারড’ বৃহস্পতিবার জানায়, অজ্ঞাতপরিচয় হ্যাকাররা এসব তথ্য চুরি করেছে। তবে কত মানুষের তথ্য বেহাত হয়েছে তা জানা যায়নি। ওয়্যারড তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, এনটিএমসি তাদের ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত একটি অরক্ষিত তথ্যভাণ্ডারের মাধ্যমে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করে রেখেছিল। যদিও কর্তৃপক্ষের দাবি, যে কোনো কাজের জন্য স্যাম্পল ডেটা (নমুনা তথ্য) দেওয়া হয়; কিন্তু আসল তথ্য দেওয়া হয় না। এরপরও যে ডেভেলপারের কাছ থেকে তথ্য লিক হয়েছে, তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, এর আগেও অরক্ষিত অবস্থায় থাকায় হ্যাকাররা তথ্য চুরি করেছিল; কিন্তু সে বিষয়ে তদন্তের কোনো অগ্রগতি আজও জানা যায়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংবেদনশীল এসব তথ্য ফাঁস কিংবা প্রকাশ যাই হোক, তা জননিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। বারবার এমন তথ্য ফাঁসের ঘটনা প্রমাণ করে, সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর দ্বারা নিয়মিত আপডেট ও নজরদারি এবং নিরাপত্তাবিষয়ক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পুরো সাইবার সিকিউরিটি কাঠামোতে বড় ধরনের গলদ রয়েছে। এ কারণে সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতায়, নাকি তথ্যপ্রযুক্তিগত সক্ষমতার অভাবে এমনটা ঘটেছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া খুবই জরুরি। কারণ এমন সংবেদনশীল বিষয়গুলোয় নিরাপত্তা ত্রুটি থাকলে, সেটার ভুক্তভোগী হয় রাষ্ট্রের জনগণ। ভার্চুয়াল জগতে গোপনীয় যে কোনো রকমের তথ্যই গুরুত্বপূর্ণ। হ্যাকারদের হাতে চলে গেলে তা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হতে পারে। যদিও বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও তথ্য ফাঁসের নজির রয়েছে, তবে বারবার এমন হওয়াটা সক্ষমতা ও পেশাদারত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনার পর গঠন করা হয় কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম বা সার্ট। বারবার এমন তথ্য ফাঁসের ঘটনা রোধে সংস্থাটিকে আরও বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে এমন তথ্য ফাঁসের কারণ উদ্ঘাটন ও তা প্রতিকারে সার্টসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ আরও কার্যকর উদ্যোগ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।