দুই মন্ত্রণালয়ের মতানৈক্য, সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা কাম্য নয়
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ভূমি অধিগ্রহণ আনুষঙ্গিক খাতে জমাকৃত অর্থ ব্যয়ের নীতিমালা বাস্তবায়নের বিষয়টি প্রায় ১৬ বছর কেটে গেলেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি আজও। এর পেছনে রয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতানৈক্য।
শনিবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, ২০০৮ সালে ভূমি অধিগ্রহণ আনুষঙ্গিক খাতে জমাকৃত অর্থ ব্যয়ের নীতিমালার খসড়া তৈরি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে মত চেয়ে পাঠায় ভূমি মন্ত্রণালয়। এ সময়ের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক, চিঠি চালাচালি, খসড়া নীতিমালা পুনরায় প্রণয়নসহ নানা কর্মকাণ্ড ঘটেছে। কিন্তু ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি দুটি মন্ত্রণালয়। এ কারণে তা আলোর মুখও দেখেনি।
জানা গেছে, নীতিমালা না থাকায় প্রতিবছরই জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এলএ শাখায় আনুষঙ্গিক খাতের অর্থ জমা হচ্ছে। সব জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের হিসাব যোগ করা হলে অর্থের এ অঙ্ক ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু বিপুল এ অর্থ ব্যয় কিংবা উত্তোলন কোনোটিই করা যাচ্ছে না।
সাধারণত সরকারি প্রতিষ্ঠান ভূমি অধিগ্রহণ করলে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে আনুষঙ্গিক খাতে খরচ হিসাবে ২ শতাংশ হারে টাকা কেটে রাখে। এটি সরকারের এক ধরনের পরোক্ষ আয়। এ অর্থ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এলএ শাখা অধিগ্রহণ কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য কম্পিউটার, প্রিন্টার, ফটোস্ট্যাট মেশিন, ভিডিও ক্যামেরা, স্ক্যানারের মতো সরঞ্জাম কেনায় ব্যয় করে থাকে। কিন্তু ব্যয় না হওয়ার ফলে দিন দিন এ খাতের অলস অর্থের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।
শুধু সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভাবে দীর্ঘকাল বিপুল অঙ্কের অর্থ আটকে থাকা দুঃখজনক। সময়মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে নীতিমালা অনুযায়ী তা খরচ করা যেত। আশার কথা, জমাকৃত এ অর্থ এখনো কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে। যেহেতু দেশের রিজার্ভ কমে আসার পরও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প সম্পন্ন করতে সরকারকে হয় সেখানে হাত দিতে হচ্ছে, নয়তো উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর কাছে শর্তসাপেক্ষে ঋণ নিতে হচ্ছে; এমন অবস্থায় এ অলস অর্থ গ্রামীণ উন্নয়নসহ নানা প্রকল্পে খরচ করা গেলে ওই দুই খাতের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা অনেকাংশেই দূর করা সম্ভব হবে। সরকার ভূমি মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতানৈক্যের সুরাহা করে জমি অধিগ্রহণ আনুষঙ্গিক খাতে ব্যয়ের নীতিমালা চূড়ান্ত এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে জমাকৃত অর্থ নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে কাজে লাগাবে, এটাই প্রত্যাশা।