Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য, কর্তৃপক্ষের ভূমিকা দৃশ্যমান নয় কেন?

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য, কর্তৃপক্ষের ভূমিকা দৃশ্যমান নয় কেন?

নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে মানুষ বহুদিন ধরেই হাঁসফাঁস করছে। মানুষের আয় না বাড়লেও নিত্যপণ্য ও সেবার দাম বেড়েই চলেছে। অনেকে ধারকর্জ করে কিংবা নিত্যপণ্য কম কিনে কোনোমতে টিকে আছেন।

যাদের ঋণ নেওয়ার সুযোগ নেই তারা কতটা কষ্টে দিনযাপন করছেন তা সহজেই অনুমেয়। কিছুদিন হলো শীতের সবজি বাজারে এসেছে; জানা গেছে, এবার উৎপাদন বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণে। সবজি প্রান্তিক কৃষকের মাঠ থেকে ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে সড়কে চাঁদাবাজিসহ কয়েকবার হাত বদল হচ্ছে। এসব কারণে বাজারে ভোক্তাকে এখনো চড়া দামেই সবজি কিনতে হচ্ছে। ভোক্তা চড়া দামে ক্রয় করলেও প্রান্তিক কৃষক ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। শুধু সবজি নয়, অন্যান্য কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। অর্থাৎ কৃষিপণ্যের উৎপাদক ও ভোক্তা দুই পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ভারী হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীর পকেট। বস্তুত ত্রুটিপূর্ণ বাজার ব্যবস্থাপনার কারণেই মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য কমছে না।

জানা গেছে, প্রতি কেজি বেগুনের উৎপাদন খরচ প্রায় ১০ টাকা। একজন ব্যবসায়ী যশোর এলাকায় পাইকারি বাজার থেকে প্রতি কেজি বেগুন ২৫-২৮ টাকায় কিনে রাজধানীর পাইকারি আড়তে ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি করেন। পরে রাজধানীর পাইকারি বাজারে এ বেগুন কেজিপ্রতি বিক্রি হয় ৫০-৫৫ টাকায়। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। প্রতি কেজি শিমের উৎপাদন খরচ প্রায় ৬ টাকা। গ্রামের পাইকারি বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৩৬ টাকায়। সেই শিম গ্রাম থেকে এনে রাজধানীর পাইকারি বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে ৫০-৫৮ টাকায়। আর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। অন্যান্য সবজির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। লক্ষ করা যায়, যখন চাষিরা লোকসানের কথা ভেবে জমি থেকে সবজি তোলা বাদ দেন বা পশুখাদ্য হিসাবে তা ব্যবহার করেন, তখনো সেসব সবজি রাজধানীতে ভোক্তাদের চড়া দামেই ক্রয় করতে হয়। নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির মুখে মানুষ আশা করেছিল, অন্তত শীতের মৌসুমে কিছুদিন সহনীয় দামে সবজি ক্রয় করতে পারবেন। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্যে ভোক্তাদের সে আশা পূরণ হচ্ছে না। এ পরিস্থিতি রোধে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর তৎপরতা একেবারেই দৃশ্যমান নয়। কৃষক ও ভোক্তার স্বার্থে সরকার বিভিন্ন স্থানে কৃষকের বাজার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিল। এটি নিঃসন্দেহ একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। দুঃখজনক হলো, সেখানেও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের খবর পাওয়া যাচ্ছে।

বাজার নিয়ন্ত্রণে এবং মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্যের অবসানে কী করণীয়, কর্তৃপক্ষের তা অজানা নয়। সরকারের দায়িত্বশীল অনেকে মাঝেমধ্যে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বললেও এখন তারা একেবারেই চুপ। বিষয়টি রহস্যজনক। আমদানিপণ্যের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রধান অজুহাত আন্তর্জাতিক বাজারদরের অস্থিরতা। কিন্তু দেশে উৎপাদিত পণ্যের বাজার এতটা অস্থির কেন? ভোক্তা বেশি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য হলেও প্রান্তিক উৎপাদক এর সুফল পাচ্ছেন না, এটি দুঃখজনক। মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্যের উৎপাদক ও ভোক্তা অব্যাহত ক্ষতিগ্রস্ত হবেন আর কর্তৃপক্ষ নীবর থাকবে; এ অবস্থার কি অবসান হবে না? মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্যের অবসানে কেন সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সফলতার পরিচয় দিতে পারছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। এসব অনিয়ম-অব্যবস্থার অবসানে বাজার তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি বিকল্প উপায়ে খাদ্যপণ্যের সরবরাহ বাড়াতে হবে। সরষের ভেতরে ভূত আছে কিনা তা-ও খতিয়ে দেখা দরকার।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম