মধ্যপাড়া শিলা খনিতে অনিয়ম
সিন্ডিকেটের খপ্পর থেকে বের হতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশে পাথরের পর্যাপ্ত মজুত থাকলেও শুধু সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে তা বাজারে মিলছে না। মঙ্গলবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, দিনাজপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনির গোডাউনে স্তূপ হয়ে আছে ৮ লাখ টনের বেশি পাথর। সিন্ডিকেটের কারণে গোডাউনসহ খনি এলাকার কোথাও পাথর রাখার জায়গা নেই। অথচ দেশে একের পর এক আমদানি হচ্ছে পাথরের চালান। এভাবে চলে যাচ্ছে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা।
অপরদিকে পাথর বিক্রি না হওয়ায় গত এক বছরে খনি প্রকল্পের ক্ষতি হয়েছে ৫০ কোটি টাকারও বেশি। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, পাথরের দাম নিয়ে মধ্যপাড়া গ্রানাইড মাইনিং কোম্পানি (এমজিএমসিএল), পেট্রোবাংলা ও জ্বালানি বিভাগের একটি অসাধু সিন্ডিকেট কাজ করছে। তাদের সমন্বয়হীনতা, অদূরদর্শিতা ও আমদানিনির্ভর নীতির কারণে পাথরের স্তূপ জমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে যখন পাথরের দাম কম, তখন খনির পাথরের দাম বাড়িয়ে রাখে এই সিন্ডিকেট। এতে খনির পাথর বিক্রি হয় না, ফলে আমদানির দিকে ঝোঁকেন ক্রেতারা। আবার বিশ্ববাজারে দাম বেশি থাকলে দেশে কমানো হয়। তখন সিন্ডিকেট দ্রুত গোডাউন খালি করে পুরো পাথর কিনে নিয়ে যায়। এভাবে সিন্ডিকেটকে অবৈধ সহায়তা দিয়ে গত এক বছরে লোকসান গুনেছে খনি কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে সম্প্রতি এমজিএমসিএল-এর পরিচালনা পর্ষদ পাথরের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য পেট্রোবাংলার কাছে প্রস্তাব পাঠালেও সেখানেও চলছে নানা কূটকৌশল।
জানা যায়, মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি থেকে যে হারে পাথর উত্তোলন করা হয়, তাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব। এতে লাভও হবে। কিন্তু একের পর এক পাথর উত্তোলনের রেকর্ড গড়ার পরও সিন্ডিকেটের নানা কারসাজিতে খনিটি এখন বন্ধের দ্বারপ্রান্তে। কঠিন শিলা খনির পাথর বিক্রিতে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। দেশের খনিজসম্পদ রক্ষা এবং অর্থনীতির স্বার্থেই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। দেশে প্রকল্প গ্রহণ থেকে শুরু করে বাস্তবায়নের নানা পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ রয়েছে; অথচ এ ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে দৃশ্যমান শক্ত কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখছি না, যা হতাশাজনক। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত চক্রটিকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে সরকার পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।