নিয়ন্ত্রণহীন হুন্ডি
অর্থ পাচারের সব পথ বন্ধ করতে হবে

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়াতে ডলারের বিনিময় হার হুন্ডির পর্যায়ে নিয়ে গেলেও লাভ হবে না-এমন মন্তব্য করেছেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান। তিনি বলেছেন, ডলারের বিনিময় হার ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা হলে দেখা যাবে হুন্ডিওয়ালারা ১৪০ টাকা দেবে। তার মতে, যারা বিদেশে অর্থ পাচার করে, তাদের কাছে বিনিময় হার কোনো বিষয় নয়, যে কোনো মূল্যে তারা তা করে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মুদ্রার অবমূল্যায়ন বা আর্থিক প্রণোদনা হুন্ডি প্রতিরোধে যথেষ্ট নয়। এমন পদক্ষেপ স্বল্পমেয়াদে প্রবাসীদের কাছে আকর্ষণীয় হলেও দীর্ঘমেয়াদে তা কতটা সুফল দেবে, সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। এছাড়া সাধারণ মানুষ তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে পর্যাপ্ত ডলার না পেলে হুন্ডি ব্যবসা চাঙা হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
জানা যায়, অনেক ব্যবসায়ী রপ্তানির পুরো অর্থ সময়মতো দেশে আনছেন না। বরং বিদেশি ক্রেতাদের পণ্যমূল্য পরিশোধের মেয়াদ বাড়িয়ে দেন। দেশ থেকে আমদানি মূল্য পরিশোধ বাবদ ডলার চলে গেলেও রপ্তানির বিপরীতে তুলনামূলক ডলার কম আসছে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে ঘাটতি। এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বস্তুত পুরো আর্থিক খাতেই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা দরকার। অবৈধ অর্থ আয়ের পথগুলো বন্ধ করতে হবে। ডলারের অবৈধ লেনদেন বন্ধ করার পদক্ষেপ নিতে হবে। যেহেতু অর্থ পাচার দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিচ্ছে, সেহেতু পাচারের সব পথ বন্ধ করার পদক্ষেপ নিতে হবে।
দেশে বিনিয়োগের আকর্ষণীয় পরিবেশ না থাকলে অর্থ পাচারের ঝুঁকি বাড়ে। রপ্তানিকারকদের আয় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশে আনা বাধ্যতামূলক করা দরকার। ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের ঘটনা রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, করব্যবস্থা সহজীকরণ এবং করহার হ্রাস করা হলে অর্থ পাচার কমবে। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির স্বার্থেই অর্থ পাচারকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা দরকার। প্রবাসী বাংলাদেশি, যারা রেমিট্যান্সের মূল প্রেরক, তাদের একটি বড় অংশ স্বল্পশিক্ষিত। তাদের অনেকে ব্যাংকব্যবস্থা সম্পর্কে অবহিত নন, যে কারণে হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠান। দেশের বিপুলসংখ্যক গরিব-স্বল্পশিক্ষিত মানুষ ব্যাংকের সেবা গ্রহণকে জটিল বিষয় মনে করে। ব্যাংকগুলো এসব মানুষের কাছে সহজে সেবা পৌঁছে দিতে পারলে তা রেমিট্যান্সপ্রবাহে প্রভাব ফেলবে।