Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

পিকে হালদারের কারাদণ্ড: দুর্নীতির বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ অব্যাহত থাকুক

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পিকে হালদারের কারাদণ্ড: দুর্নীতির বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ অব্যাহত থাকুক

দেশের আর্থিক খাতে ব্যক্তিপর্যায়ে উল্লেখযোগ্য জালিয়াতির ঘটনা ঘটানো এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার তথা পিকে হালদারকে ২২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। নানা কৌশলে নামে-বেনামে একের পর এক কোম্পানি খুলে জালিয়াতি-প্রতারণার মাধ্যমে দেশের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে পথে বসিয়েছেন এই প্রতারক। এমন ব্যক্তিকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া অবশ্যই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে দেশ-বিদেশে থাকা তার আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত আনাটাও জরুরি।

সোমবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় আর্থিক খাত থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা লোপাটের দায়ে তাকে পৃথকভাবে ২০০৪ সালের দুদক আইনের ২৭(১) ধারায় ১০ বছর এবং অর্থ পাচারের দায়ে ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। এসব ধারার সাজা একটার পর একটা চলবে বিধায় পিকে হালদারকে ২২ বছর কারাভোগ করতে হবে। রায়ে কারাদণ্ড ছাড়াও দুদক আইনের ২৭(১) ধারায় ৩৪৮ কোটি এবং মানি লন্ডারিং আইনের ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় ৬৯৬ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া দুর্নীতিতে সহযোগিতা করার জন্য তার মা, ভাই, বান্ধবী ও আত্মীয়সহ অপর ১৩ জনের প্রত্যেককে ৭ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, পিকে হালদারের বিরুদ্ধে দুদকের করা ৫২টি মামলার মধ্যে এটি প্রথম মামলার রায়। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে চার আসামি বাদে পিকে হালদারসহ দণ্ডিত ১০ জনই পলাতক রয়েছেন। দুদকের এক আইনজীবী জানিয়েছেন, ভারতে আটক পিকে হালদারকে বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। আশা করি দ্রুত এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

পিকে হালদার কত বড় প্রতারক, তা দুদকের তদন্তেই উঠে এসেছে। তিনি নানা কৌশলে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনেছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের লোকদের পর্ষদে বসিয়ে অন্তত চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন। অস্তিত্বহীন অন্তত ৩০-৪০টি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ঋণের নামে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। আত্মসাৎকৃত এসব অর্থ দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে নামে-বেনামে কিনেছেন বিপুল পরিমাণ জমি ও ভবন। শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও পাচার করেছেন কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ।

দেশের বিভিন্ন সেক্টরে পিকে হালদারের মতো যেসব ব্যক্তি দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ ও তা বিদেশে পাচার করে দেশকে সংকটে ফেলছে, এই রায় তাদের জন্য হতে পারে সতর্কবার্তা। আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, একজন মেধাবী অপরাধে জড়ালে তা জাতির জন্য কতটা বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ান, তার উদাহরণ এই পিকে হালদার। তবে একজন পিকে হালদারকে শাস্তি দিয়েই প্রশান্তির শ্বাস ছাড়ার সুযোগ নেই। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে লুকিয়ে থাকা এমনসব দুর্নীতিবাজকে খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এতে জনগণের মধ্যে যেমন বিচারব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধা বাড়বে, তেমনি দেশের অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সরকার দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে এমন কঠোর পদক্ষেপ অব্যাহত রাখবে, এটাই প্রত্যাশা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম