বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জে গণতন্ত্র
স্থিতিশীলতা আনতে সম্মিলিত প্রয়াস জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিশ্বে শান্তি ও গণতন্ত্র এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বাড়ছে উগ্রবাদ। এমন জটিল পরিস্থিতিতে সুশীল সমাজ এবং এনজিওর (বেসরকারি সেবা সংস্থা) ভূমিকা দিনদিন সংকুচিত হয়ে আসছে। রাজনৈতিক কারণে তারাও দ্বিধাবিভক্ত। মানুষের মৌলিক অধিকার এখন বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন। এ অবস্থার উত্তরণে সম্মিলিত প্রয়াস জরুরি। বিশেষ করে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতায় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে এগিয়ে আসতে হবে। শনিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত বে অব বেঙ্গল কনভারসেশনের প্রথম দিনে বক্তাদের কণ্ঠে এসব কথাই উঠে এসেছে। তারা বলেন, আমরা গণতন্ত্র, শান্তির স্বপ্ন দেখলেও বাস্তবে বিশ্বব্যাপী এ ব্যবস্থা চ্যালেঞ্জে রয়েছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বৈষম্য বাড়ছে, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনে বাড়ছে ঝুঁকি। এর ওপর রয়েছে উন্নত দেশগুলোর নানা যুদ্ধের প্রভাব। ফলে কিছু কিছু অঞ্চলে ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। বিভিন্ন সময়ে তৈরি হচ্ছে উত্তেজনা, ছড়িয়ে পড়ছে মৌলবাদ। যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া দ্বন্দ্ব, আবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য চলছে। বিভিন্নভাবে অন্য দেশগুলোকে তাদের আয়ত্তে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে। পৃথিবীতে এখন জোটবদ্ধতা কমে যাওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের মতো প্রাকৃতিক সমস্যা এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। নিজেদের স্বার্থেই এ থেকে বের হয়ে আসা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
মালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মওসা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে কোনো পক্ষের জয়ী হওয়ার সক্ষমতা নেই; কিন্তু তৈরি করছে ধ্বংসযজ্ঞ। ফলে দুঃখের বিষয়-অনন্ত এ যুদ্ধের মতো অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত দ্বিধাবিভক্তি বিশ্বশান্তির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার জের টানতে হচ্ছে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকেও। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রাজনৈতিক দল যখন রাস্তায় গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করে, তখন সুশীল সমাজ তাদের বন্ধু থাকে। কিন্তু তারা আবার যখন ক্ষমতায় যায়, তখন সুশীল সমাজ শত্রু হয়ে যায়। তাই এখন পরামর্শ দিয়ে কাউকে এগিয়ে নেওয়ার সময় নয়। এখন সময় টিকে থাকা এবং নতুন কোনো সুযোগের জন্য অপেক্ষা করা। এছাড়া এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সম্ভাবনা, আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি, দারিদ্র্য ও আয়ের সমতা উন্নতির প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আলোচনা হয়।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) উদ্যোগে বাংলাদেশে দ্বিতীয়বার মতো আয়োজিত তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনে ৭৫টি দেশের ২ শতাধিক আলোচক অংশ নিচ্ছেন। এছাড়া রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সম্মেলনে অংশ নেওয়া ছয় শতাধিক প্রতিনিধি। এবারের আলোচ্য বিষয় ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যু, ভূরাজনীতি ও ভূ-অর্থনীতি। সম্মেলনের লক্ষ্য, বে অব বেঙ্গল অঞ্চলের দ্রুত বিকাশমান পরিস্থিতিকে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জানা-বোঝা।
আমরাও মনে করি, বিশ্বশান্তি এখন মানবজাতির জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘাতময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ চ্যালেঞ্জ উত্তরণে বিশ্বের পরাশক্তিসহ সব পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। যুদ্ধ চাই না, আমরা একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পৃথিবীতে বসবাস করতে চাই।