মামলার জালে গরিব কৃষক
ঋণ আদায়ে বৈষম্য দূর হোক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
খেলাপি ঋণের ভারে কোনো কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হলেও হাজার বা শতকোটি টাকার ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে না কোনো ব্যবস্থা, অথচ ১ লাখ টাকার নিচে ঋণ নেওয়া কৃষকদের বিরুদ্ধে মামলা করছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। কথায় আছে, ‘যত দোষ, নন্দ ঘোষ’। বড় আকারের ঋণখেলাপিদের সব দোষ মাফ হলেও স্বল্প ঋণ নিয়ে মহাবিপদে পড়ছেন গরিব কৃষক। মঙ্গলবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দিনরাত পরিশ্রম করে যারা ফসল উৎপাদন করেন, কৃষিঋণের সামান্য কটি টাকার জন্য তাদের নামে করা হচ্ছে একের পর এক মামলা। সেই কৃষিঋণের পরিমাণ যে খুব বেশি, তাও নয়। তারা ঋণ নিয়েছেন মাত্র ৫ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা। আমরা বলে থাকি, কৃষক বাঁচলে বাঁচবে দেশ। বাস্তবে দেখা যায়, ঋণের সামান্য টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে গরিব কৃষকের রাতের ঘুম হারাম হচ্ছে। গ্রেফতার আতঙ্কে অন্যত্র পালিয়ে থাকেন তারা। স্বল্প ঋণের ক্ষেত্রে টাকা বকেয়া পড়ায় জেলেও যেতে হয়েছে অনেককে। অপরদিকে, হাজার কোটি টাকার ঋণখেলাপিদের ঋণ অবলোপন করছে ব্যাংকগুলো। এছাড়া নানা ধরনের বিশেষ সুবিধা আদায় করে দাপটের সঙ্গে তারা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বও দিয়ে যাচ্ছেন। দেশে এ চরম বৈষম্যমূলক পরিস্থিতির অবসান জরুরি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের চলতি বছরের জুলাইভিত্তিক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, স্বল্প ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করা কৃষকদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৯ হাজার ৩৫৭টি মামলা (সার্টিফিকেট মামলা) করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংক। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলোর পাওনা ৩৯৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৪ হাজার ৩৯৮টি মামলা রয়েছে, যেগুলোর প্রতিটির পাওনা ১ লাখ টাকার নিচে। বাকি মামলা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। প্রায় ৫৭ হাজার মামলা করে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, সামান্য অর্থের জন্য গরিব কৃষকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা না করে বরং তাদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা করতে হবে। গরিব কৃষক কখনো ব্যাংকের টাকা মেরে খায় না। খুব বেশি বিপদে না পড়লে তাদের ব্যাংকের টাকা পরিশোধ না করারও কথা নয়। উল্লেখ্য, আগের অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে কৃষিঋণ আদায় বেড়েছে ৫ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা।
দেখা যাচ্ছে, দরিদ্র কৃষকের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে ব্যাংকগুলো যতটা তৎপর, ঠিক ততটাই নিষ্ক্রিয় বড় বড় ঋণখেলাপির কাছ থেকে টাকা আদায়ে। বস্তুত লুটেরাদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের উদাহরণ খুবই নগণ্য। ঋণ আদায়ে এমন বৈষম্য কাঙ্ক্ষিত নয়। বরং বড় ঋণখেলাপি এবং পুঁজি পাচারকারীদের বিরুদ্ধেই নিতে হবে আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। ঋণ অবলোপন করতে হলে গরিব কৃষকের ক্ষেত্রে করা উচিত, রাঘববোয়ালের ক্ষেত্রে নয়। দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালনকারী কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা করা থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বিরত থাকবে, এটাই প্রত্যাশা।