জমি বেদখল বন্ধে আইন
প্রকৃত মালিকের অধিকার নিশ্চিত হোক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশে জমির মালিকানাসংক্রান্ত বিরোধের অন্ত নেই। মাঠ পর্যায়ে যারা ভূমি জরিপের কাজ করে থাকেন, তারা অর্থের বিনিময়ে প্রচুর অনিয়ম করেন, দায়িত্বে অবহেলারও অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে তৈরি হয় ভূমির মালিকানা নিয়ে জটিলতা। এছাড়া ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে অন্যের জমি হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাও অসংখ্য।
বিশেষত গ্রামের অশিক্ষিত দুর্বল শ্রেণি ভূমি নিয়ে চক্রান্তকারীদের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারেন না। ফলে বঞ্চিতরা বাধ্য হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হলেও আইনি মারপ্যাঁচে সেখানেও ভোগান্তি ও দীর্ঘসূত্রতার শিকার হন। অনেকে মামলা চালাতে গিয়ে সহায়সম্বল হারিয়ে একসময় বার্ধক্যে এসে মারাও যান; কিন্তু প্রতিকার আর দেখে যেতে পারেন না। এমন অনিয়ম, ভোগান্তি ও দীর্ঘসূত্রতা বন্ধে সরকার প্রশংসনীয় একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
সোমবার ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিল-২০২৩’ শিরোনামে একটি বিল জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। এ আইনে অন্যের জমি দখলে রাখা, জাল দলিল তৈরি এবং হস্তান্তরে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান থাকছে। সংসদে উত্থাপনের পর বিলটি পরীক্ষার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
সাধারণত জমিসংক্রান্ত যেসব বিরোধ আদালত পর্যন্ত গড়ায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার রায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দখলদারের পক্ষেই যায়, যার পেছনে কার্যত ‘সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ও ৯ ধারা’ কাজ করে। কোনো ব্যক্তি কোনো সম্পত্তি বেআইনিভাবে দখল করলেও তাকে সহজে দখলচ্যুত করা যায় না। তবে নতুন আইনের মাধ্যমে সেই প্রতিবন্ধকতার নিরসন হতে যাচ্ছে।
এর ফলে নাগরিকের নিজ নিজ মালিকানাধীন ভূমিতে নিরবচ্ছিন্ন ভোগদখলের অধিকার নিশ্চিত হবে। ভূমিবিষয়ক প্রতারণা ও জালিয়াতির ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিতকরণ ও প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া যাবে। ভূমিসংক্রান্ত অপরাধের আইনি প্রক্রিয়ারও দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। গণতান্ত্রিক দেশে জমির প্রকৃত মালিকের অধিকার সুরক্ষায় এমন আইন আরও আগে প্রণীত হওয়া উচিত ছিল। এখন আইনটি পাসের মাধ্যমে ভূমি জরিপসংক্রান্ত মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি হবে, এটাই প্রত্যাশা।