স্মার্ট মিটারে ওভার স্মার্ট দুর্নীতি: অনিয়ম রোধে নজরদারি বৃদ্ধি জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ, রিডিং চুরি, ওভারলোড, মিটার রিডারদের দুর্নীতির মতো বিদ্যুৎ খাতের নানা অপচয় ও বকেয়া বিল ঠেকাতে ভিশন-২০২১-এর আওতায় স্মার্ট প্রিপেইড মিটার সংযোজনের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। এ ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে ব্যয় সাশ্রয় করতে দেশেই মিটার তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়। দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ স্মার্ট ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি (বেসিকো)। চীনা প্রতিষ্ঠান হেক্সিং ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানির সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চার করে এই বেসিকো প্রতিষ্ঠা করা হয়।
পরিতাপের বিষয়, বিদ্যুৎ খাতের অনিয়ম ঠেকাতে সরকার বিপুল অর্থ খরচ করে যে উদ্যোগ নিয়েছিল, সেটাতেই ধরা পড়েছে মহাদুর্নীতি। শুক্রবার যুগান্তরে প্রকাশ, ‘স্মার্ট প্রিপেইড মিটার’ নামে বিদ্যুৎ খাতের ৪২৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্পে এমন মহাদুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। এ প্রকল্পের আওতায় বিদেশ থেকে মিটার কিনে এনে সেগুলোকে টেম্পারিং করে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লিখে ৮৪ কোটি টাকা পাচার করার অভিযোগ উঠেছে।
পাশাপাশি প্রকল্পের কর্মীদের বিদেশ থেকে ট্রেনিং করানোর নামে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ১৮ কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। এভাবে স্মার্ট মিটারকে সেবা ক্রয় খাত দেখিয়ে ৩৪ কোটি টাকা বিদেশে পাচার, বেশি দামে মিটার বিক্রি করে ২৪ কোটি টাকা গচ্চা দেওয়া, এলসির মাধ্যমে অর্থ পাচার, দুর্নীতি, জাল-জালিয়াতিসহ বিভিন্ন খাতে দেড়শ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগও পাওয়া গেছে। রয়েছে লোক নিয়োগেও অনিয়মের অভিযোগ।
বিদ্যুৎ খাতের অন্যতম বড় কোম্পানি ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) নিজস্ব নিরীক্ষায় (অডিট) এসব দুর্নীতি ধরা পড়েছে। যদিও এ প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানেই কোম্পানিটি গড়ে উঠেছে। জানা গেছে, এ ঘটনায় বেসিকোর মূল কোম্পানি অর্থাৎ ওজোপাডিকোর পক্ষ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি আদালতে মামলাও করা হয়েছে।
বস্তুত বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার ব্যবস্থার জন্মলগ্ন থেকেই ব্যবহারকারীরা নানা দুর্ভোগে জ্বলছিলেন। রিচার্জে অসুবিধা, বেশি বিল আসা, সরকারি ছুটির দিনে রিচার্জ বুথ বন্ধ থাকা, মিটার লক হয়ে যাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার দায় চাপিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ আদায় ইত্যাদি নানা ভোগান্তির অভিযোগ রয়েছে। গ্রাহকদের মনে তবুও সান্ত্বনা ছিল, এর ফলে হয়তো বিদ্যুতের মতো দেশের মূল্যবান ও প্রয়োজনীয় সম্পদের অপচয় ও অপব্যবহার রোধ করা গেছে।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে, গ্রাহক পর্যায় থেকে অনিয়ম দূর করতে গিয়ে পরিচালনা পর্যায়েই দুর্নীতির পাহাড় জমেছে। খোদ ওজোপাডিকোর নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) রতন কুমার দেবনাথের মতে, দেশের ইতিহাসে এটি অন্যতম বড় একটি কেলেঙ্কারি। আশার কথা, পুরো ঘটনাটি এখন বিচারাধীন।
দেশে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা বর্তমানে চার কোটির বেশি। তাদের মধ্যে প্রায় ৪২ লাখ গ্রাহক প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করছেন। এর মধ্যে প্রায় ৯ লাখ স্মার্ট প্রিপেইড মিটার। বাকি সাড়ে তিন কোটির বেশি গ্রাহকের বিল পোস্টপেইড মিটারের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হচ্ছে। স্মার্ট প্রিপেইড মিটারের মতো পোস্টপেইড মিটারের সব ক্ষেত্রে এমন দুর্নীতি লুকিয়ে রয়েছে কিনা, সেটিও তদন্তের দাবি রাখে। জ্বালানির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে সরকার বিশেষ দৃষ্টি দেবে, এটাই প্রত্যাশা।