উপেক্ষিত শেয়ারবাজার
বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে আন্তরিক হতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতীকী ছবি
শেয়ারবাজার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক; কিন্তু জাতীয় নির্বাচন, দ্রব্যমূল্য এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুর কারণে তা সামনে আসছে না। সরকারের কাছেও বাজারের গুরুত্ব হারিয়েছে। শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে এমনটাই জানা গেছে, যাকে নীরব ‘রক্তক্ষরণ’ হিসাবে অভিহিত করা হচ্ছে। মঙ্গলবার যুগান্তরে প্রকাশ, একদিকে ফ্লোর প্রাইসের (নিম্নসীমা) কারণে পুঁজি আটকে থাকায় মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজের সুদ বাড়ছে, অপরদিকে অল্প লেনদেনের মধ্যে শক্ত মৌলভিত্তির বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম কমছে। দিন দিন বিনিয়োগকারীদের পুঁজি উধাও হয়ে যাচ্ছে। আসছে না নতুন বিনিয়োগ।
শেয়ারবাজারের এই বহুমুখী চাপের পেছনে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটকে মূল সমস্যা হিসাবে দেখছেন শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
তিনি যুগান্তরকে জানিয়েছেন, ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট ছাড়াও ডলারের দাম বৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও সঞ্চয় কমে যাওয়া, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং জাতীয় নির্বাচনসহ বেশকিছু ইস্যু বাজারের জন্য অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করছে। তবে এত চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ঠেকাতে দেওয়া হয়েছে ফ্লোর প্রাইস।
শেয়ারবাজারে অস্থিরতার নজির নতুন নয়। আবার বিভিন্ন সময়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজার থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার উদাহরণও রয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা স্বভাবতই পুঁজি হারানোর আতঙ্কে ভোগেন। করোনা মহামারির সময় অস্থিরতা ঠেকাতে বিএসইসি’র চালু করা শেয়ারের দাম কমার নিম্নসীমা তথা ফ্লোর প্রাইস বর্তমানে কতটা কাজে দেবে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে অলিখিতভাবে চিহ্নিত কয়েকটি সিন্ডিকেট বাজার ওঠানো-নামানোর পেছনে কাজ করছে। শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোটা দাগে বাজারে দুটি সংকট বিদ্যমান। একদিকে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই; অন্যদিকে সরবরাহের দিক থেকে ভালো কোম্পানির সংখ্যা কম। ফলে কারসাজি ও সিন্ডিকেটের জয়জয়কার অবস্থা। এর ফলে দুর্বল অস্তিত্বে টিকে থাকা শেয়ারবাজার ক্রমেই আরও দুর্বল হচ্ছে।
এমন অবস্থায় সবার আগে আস্থা সংকট দূর করতে পদক্ষেপ নেওয়াটাই জরুরি বলে মনে করি আমরা। এক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আস্থা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ কারসাজির মাধ্যমে কেউ বিনিয়োগকারীর টাকা হাতিয়ে নিলে বিচার হবে-এই মর্মে নিশ্চয়তা দিতে হবে। পাশাপাশি ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। কঠিন হলেও এ দুই পদক্ষেপের মাধ্যমে বাজারের সমস্যা দূর করতে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে, এটাই প্রত্যাশা।