শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার উদ্বেগজনক হার
প্রতিরোধ এবং পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
দেশে প্রতিবছর শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে লাখ লাখ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। অল্প বয়সে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরা অর্জিত জ্ঞান কোনো কাজে লাগাতে পারে না। ফলে তারা সম্পদ হওয়ার পরিবর্তে সমাজের বোঝায় পরিণত হয়। বর্তমানে এইচএসসি পাশ করেও দেশে কাঙ্ক্ষিত চাকরি মিলছে না। অথচ এইচএসসি পাশ করার আগেই প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। জানা যায়, উচ্চমাধ্যমিকে গত দুবছরে প্রায় ৪১ শতাংশ শিক্ষার্থী লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে। ২০২১ সালে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাশ করেছিল ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৬ জন। তাদের মধ্যে এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় নিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসাবে অংশ নিচ্ছে ১২ লাখ ৩৪ হাজার ৯৩৯ জন। এ হিসাবে ৮ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। কেন শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে, এ বিষয়ে গবেষণা করে সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নিতে হবে। বর্তমানে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে বহুগুণ; শিক্ষার বিভিন্ন সামগ্রীর অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি-এসব কারণেও নতুন করে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ঝরে পড়া শিশু শিক্ষার্থীদের অনেকেই অভিভাবকহীন-পথশিশু। এসব শিশুর শিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারকে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া না হলে তাদের অনেকের ঝরে পড়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের নানা রকম অপরাধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এদিকেও কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করা গেলে কিশোর অপরাধ কমবে, এটা আশা করা যায়।
একজন হতদরিদ্র ব্যক্তিও চান তার সন্তান লেখাপড়া করুক। কিন্তু লেখাপড়ার ব্যয়ভার বহন করতে না পারার কারণেও অনেকের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না। দারিদ্র্য দূর করা না গেলে শিক্ষাক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে। শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করা ও ধরে রাখার জন্য সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এরপরও শিশুদের ধরে রাখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারিভাবে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে কর্মমুখী শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। একজন শিক্ষার্থী যাতে নিজ বাড়িতেই বসে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষার্থীদের দক্ষতা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়ছে না। এ কারণেও শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। কাজেই গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষকের ঘাটতি দূর করতে হবে। শিক্ষা খাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করতে হবে। একই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে বিনিয়োগকৃত অর্থের সঠিক ব্যবহার।