Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

ব্যাংক পরিচালকরাও ঋণখেলাপি: আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ব্যাংক পরিচালকরাও ঋণখেলাপি: আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে

এক ব্যাংকের পরিচালক কর্তৃক অন্য ব্যাংক থেকে যোগসাজশ করে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আরও উদ্বেগজনক, পরিচালকরা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে আর ফেরত দিচ্ছেন না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ব্যাংক খাতে ১৪ লাখ কোটি টাকারও বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংক পরিচালকরা নিয়েছেন প্রায় ২ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১১ শতাংশ।

ব্যাংক পরিচালকদের এ ঋণের বেশিরভাগই যোগসাজশের। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে প্রায় ৭৫৭ কোটি টাকা। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কারও এক টাকাও খেলাপি থাকলে তার ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার বা থাকার সুযোগ নেই। কিন্তু বাস্তবে এ আইনের প্রয়োগ না থাকায় খেলাপি হয়েও অনেকে পরিচালক পদে বহাল রয়েছেন। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কঠোর ভূমিকা কাম্য।

আমরা দেখেছি, বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক ও অর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালকদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অভিযোগটি হলো, নিজ ব্যাংক থেকে নিয়ম অনুযায়ী ঋণ নেওয়ার সুযোগ না থাকায় ব্যাংক পরিচালকরা অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেন এবং যোগসাজশের মাধ্যমে ভাগাভাগি করে নেওয়া ঋণের বড় অঙ্কের টাকা আর ফেরত দেন না। এর ফলে মন্দ ঋণের পরিমাণ বাড়ছে, যা দেশের ব্যাংক খাত তথা অর্থনীতির জন্য একটি বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। এ ব্যাপারে এখনই সতর্ক না হলে আরও বেশি আস্থা সংকটে পড়বে ব্যাংক খাত। বলা যায়, ভেঙে পড়বে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা।

এ কথা সর্বজনবিদিত যে, অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংকের মালিক ও পরিচালক রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকরাও রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পান। এর ফলে তাদের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব অনেকটাই শিথিল। এ সুযোগে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তারা নানা ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারির জন্ম দিচ্ছেন। ব্যাংকগুলোর শীর্ষ পর্যায়ে থাকা ব্যক্তিদের দুর্নীতি দেশের সামগ্রিক আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে গ্রাস করে ফেলছে এবং এর ফলে খেলাপি ঋণ, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম-জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা বাড়ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থাকে অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত করার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। মূলত দুর্নীতি ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই ব্যাংক ও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছে না। প্রচলিত ব্যাংক ব্যবস্থা দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে ব্যর্থ হলে এর ফল যে ভালো হবে না, তা নিশ্চিত। এতে দেশের অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চারের কাজটি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। খেলাপি ঋণসহ ব্যাংক পরিচালকদের সব ধরনের অনিয়মের অবসান ঘটাতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবশ্যই আইনি কাঠামোর আওতায় ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে। আর যেসব ব্যাংক পরিচালক রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশে অর্থ মন্ত্রণালয়কেও দাঁড়াতে হবে। তা না হলে দুর্নীতি ও খেলাপি ঋণের প্রবণতা বন্ধ হবে না।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম